চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম। শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় নগরীর জামালখান প্রেসক্লাব চত্বরে এ কর্মসূচি পালিত হয়। বিক্ষোভ শেষে তারা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন (সিএমপি) পুলিশের কার্যালয় ঘেরাও করেন ।
চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকায় গভীর রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থনে মিছিলকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ওই সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হলে তিন থানার ওসিসহ পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন তারা।
কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ বলেন, ছাত্রলীগ শিক্ষার্থী ও জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীকে খুন করেছে। কাউকে কুপিয়ে জখম করেছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলায় অনেক শিক্ষার্থী হাত-পা হারিয়েছেন। ফলে এ সন্ত্রাসী সংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিছিলকারীদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে সিএমপি পুলিশ কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে গণহত্যায় জড়িত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নেমে স্লোগান দিয়েছে। এখানে প্রশাসনের ব্যর্থতা আছে। দেশের স্বার্থে কাজ করুন। নয়তো আপনাদের বিরুদ্ধেও আমাদের আওয়াজ উঠবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা ভেবেছিল আমরা ঘুমাইয়া গেছি, তারা বুঝেনি আমরা তাদের গর্ত থেকে বের হওয়ার সুযোগ দিয়েছি। আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই যারা এখনো খুনি হাসিনার পক্ষ নিয়ে, স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে যারা জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত- তারা কোনো না কোনোভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।’
আরেক সমন্বয়ক জোবায়ের আলম বলেন, ‘প্রশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের এই প্রতিবাদ। প্রশাসন থাকার পরও ছাত্রলীগ মিছিল করেছে। অবিলম্বে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ, তারা গণহত্যা চালিয়েছে।’কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা নানা স্লোগান দেন। তারা ‘আমার ভাই কবরে/খুনি কেন বাইরে’, ‘আমার সোনার বাংলায়/ফ্যাসিস্টদের ঠাঁই নাই’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ/শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা/হুঁশিয়ার সাবধান’—এ রকম আরও নানা স্লোগান দেন।
চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকায় গভীর রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থনে মিছিলকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ওই সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হলে তিন থানার ওসিসহ পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে নগরের দামপাড়ায় সিএমপি কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে এ আল্টিমেটাম দেন চট্টগ্রামের সমন্বয়করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যে দেশের মাটিতে এখনো শহীদদের রক্ত মিশে আছে সে মাটিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ খুনি শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যেহেতু ছাত্রলীগ-যুবলীগের খুনি-সন্ত্রাসীদের পুলিশ আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি তাই তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি৷ জামালখানে খুনি শেখ হাসিনার পক্ষে যারা স্লোগান দিয়েছে তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি প্রশাসন আইনের আওতায় আনতে না পারে তাহলে চকবাজার, কোতোয়ালী এবং পাঁচলাইশ থানার ওসিকে পদত্যাগ করতে হবে। একইসাথে সিএমপি কমিশনারকেও প্রত্যাহার করতে হবে। যদি না হয় আমরা আগামীকাল থেকে কঠোর কর্মসূচি দেব।’
এর আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা মিছিলকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। বিক্ষোভ শেষে তারা মিছিল সহকারে সিএমপি কার্যালয় ঘেরাও করে অবস্থান নেয়।
গতকাল (শুক্রবার) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তিনটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে ২০-৩০ জন তরুণ জামালখান এলাকায় কয়েক মিনিটের মিছিল করে সটকে পড়েন। মিছিলের অগ্রভাগে মোটরসাইকেল যোগে কয়েকজন তরুণ ছিলেন। যাদের মুখোশ দিয়ে ঢাকা ছিল। মিছিলে‘শেখ হাসিনার ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দেন তারা এরপর দ্রুতই তারা ওই স্থান ত্যাগ করে চলে যান।
মোহাম্মদ ইউসুফ/এমএ