Site icon জনতার বার্তা | জনগনের পক্ষে, জনতার কথা বলে

বর্ধিত সময়েও শেষ হয়নি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচির নির্মাণ

বর্ধিত সময়েও শেষ হয়নি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচির নির্মাণ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পার হলেও শেষ হয়নি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের নির্মাণ কাজ। নানা উদ্যোগে বর্ধিত সময়ের পরও স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশের বাঁধায় বারবার থমকে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত প্রকল্পটি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর দে-এর নেতৃত্বে প্রায় ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫০০ মিটার দীর্ঘ সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে সেই প্রাচীর।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অংশে প্রাচীর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলেও ২০২৪ সালের জুলাই মাসে স্থানীয়দের গণঅভ্যুত্থানে নতুন বিজ্ঞান ভবন, বঙ্গমাতা হল, বটতলা ও চুরুলিয়া মঞ্চ সংলগ্ন অংশে নির্মিত প্রাচীর ভেঙে ফেলে স্থানীয়রা। এ ছাড়া জঙ্গলবাড়ি, নিমাইসিটি এবং চারুদ্বীপ সংলগ্ন এলাকায়ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বাঁধা দেয় প্রভাবশালী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাচীর নির্মাণের অসমাপ্ত কাজ শেষ করা হবে এবং ১ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য প্রধান দুটি গেট ব্যবহার করার নির্দেশনা দেয়া হয়।

কিন্তু ফের বাধার মুখে পড়ে প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলমের সাথে সাক্ষাৎ করে বিকল্প রাস্তার জন্য মৌখিক আবেদন জানান। উপাচার্য তাদের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে ১৫ দিন সময় দেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিকল্প রাস্তা তৈরি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা লিখিত আবেদন করে আরও ১৫ দিন সময় চেয়ে নেন। উপাচার্য তাদের অনুরোধে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেন। পাশাপাশি ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সাথে সমন্বয় করে বিকল্প রাস্তা তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়। সময় শেষ হলেও সীমানা নির্মাণ কিংবা মেরামত কাজে হাত দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সীমানা খোলা রাখার জন্য যারা লিখিত আবেদন করে বাঁধা দিয়েছেন, তারমধ্যে রয়েছে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সেক্রেটারি ড. সোহেল রানা, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. নজরুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক সঞ্জয় মুখার্জি, এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আসিফ ইকবাল আরিফ, এইচআরএম বিভাগের কেয়ারটেকার নাজমুল ইসলাম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার নাজমুল হুদা, উপ-প্রধান প্রকৌশলী স্বপন কুমার শীল, এবং কলা অনুষদের সহকারী রেজিস্ট্রার আমিনুল হক, অর্থ ও হিসাব বিভাগে কর্মরত সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জুনায়েদ কবির, ফিন্যান্স বিভাগের কেয়ারটেকার জহিরুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের অফিস সহকারী আবু বকর সিদ্দিক, এবং কেয়ারটেকার তাইজুদ্দিন, প্রকৌশল বিভাগের ইলেকট্রিশিয়ান মোজাম্মেল হক, পাম্প অপারেটর আব্দুল হাই, নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) আসাদুজ্জামান আসাদ, এবং প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা এসএম আতিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কেয়ারটেকার কামরুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, এবং শামসুজ্জামান, উপাচার্য দপ্তরের সেকশন অফিসার তানভীর হাসান, রেজিস্ট্রার দপ্তরের গার্ড আব্দুর রাজ্জাক, এবং ইইই বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন ও মৃত আবুল হোসেন-এর নামও রয়েছে এই তালিকায়। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “পূর্বে ব্যবহৃত পথেও চলাচল বন্ধ করতে চাইছে প্রশাসন। এতে আমরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবো।” এ দিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, “সীমানা প্রাচীরের গুরত্বপুর্ণ একাধিক স্থানে ভেঙে ফেলা হয়েছে, এটা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সংকট তৈরি করছে।”

প্রাচীর মেরামত প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “শিক্ষক ও স্থানীয়দের অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রাচীর নির্মাণ কাজের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছিলো। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাথেও কথা হয়েছে। হুটহাট তো সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। তাদের জন্য বিকল্প চলাচলের ব্যবস্থা করে তারপর অসমাপ্ত কাজ শেষ করা হবে।”

সাইফুল ইসলাম/এমএ

Exit mobile version