জাবি প্রতিনিধি: অসুস্থতা ও স্ত্রী চলে যাওয়ার বেদনাসহ নানা প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন ৪৫ বছর বয়সি শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান তকু।
বৃহস্পতিবার (১৩ই ফেব্রুয়ারি) কলা ও মানবিকী অনুষদের অধীনে ‘সি’ ইউনিটের তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
তৌহিদুর রহমান তকুর বাড়ি নওগাঁ জেলার সদর উপজেলায়। তার বাবা মৃত বজলুর রশিদ পেশায় ছিলেন একজন স্টেশন মাস্টার। কিশোর বয়সে নিম্ন-মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার আগেই মস্তিষ্কের জটিল রোগে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। প্রায় ২৬-২৭ বছর অসুস্থতার সাথে লড়াই করেন তিনি।ছেড়ে চলে যান নিজের বিয়ে করা স্ত্রীও। সুস্থ হওয়ার পরে নওগাঁ সরকারি কে. ডি স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেডিসি, দাখিল এবং আলিম পাশ করেন। পরবর্তীতে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
তার জীবন যুদ্ধের ব্যাপারে জানতে চাইলে তৌহিদুর রহমান তকু বলেন, “অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় মস্তিষ্কের এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে আমি দীর্ঘদিন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলাম। এরপর ২০১৭-২০১৮ সালের দিকে সুস্থ হয়ে আমি নতুন করে পড়াশোনা শুরু করি। ২০১৯ সালে জেডিসি, ২০২১ সালে দাখিল এবং ২০২৪ সালে আলিম পাশ করি। এরপর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছি। সুস্থ হওয়ার পরে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে। নিজেকে আরও সুসংগঠিত ও সুনিয়ন্ত্রিত করে প্রতিষ্ঠিত নাগিরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।”
ভর্তি প্রস্তুতি ও পড়া শেষে কী হতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এবছর আমার প্রস্তুতি তেমন ভালো নয়। ইংরেজিতে খানিকটা দুর্বল আমি। এ বছর হয়তো বা চান্স পাব না। তবে যদি পাই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে একজন শিক্ষক হতে চাই। আমি গরিব শিক্ষার্থীদের সাহায্য এবং তাদেরকে স্বল্প খরচে পড়াতে চাই। দেশের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা যেন কম খরচে ভালো মানের শিক্ষা পায় সেই প্রচেষ্টা থাকবে।”
স্ত্রী চলে যাওয়ার পরে মা ও বড় বোন দেখাশোনা করেন তাকে। যোগ্যতা অনুসারে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিবেন তিনি। সুযোগ পেলে বাংলা অথবা ইংরেজিতে পড়তে চান তিনি।
মোঃ আরিফ হোসেন/এমএ