মো. এ কে নোমান, নওগাঁ: হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের বিরুদ্ধে নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সকাল ১০টায় ইনস্টিটিউট চত্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিয়া আফরিনের কাছে ৬ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, হাইকোর্টের রায়ের ফলে তাদের চাকরির সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাবে। রায়ে বলা হয়েছে, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩০% পদ নন-টেকনিক্যাল বা অকারিগরি ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তাদের ‘জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর’ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হবে। সাধারণত এই পদ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য নির্ধারিত ছিল। ফলে ভবিষ্যতে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের চাকরির সুযোগ কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, “চার বছর কঠোর পরিশ্রম করে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করার পরও আমাদের জন্য নির্ধারিত পদ কমিয়ে নন-টেকনিক্যালদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি অবিচার এবং অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত।”
এর আগে, শিক্ষার্থীরা গত বুধবার (১৯ মার্চ) সকালে শহরের মুক্তির মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ক্লাস ও মিড টার্ম পরীক্ষা বর্জন করেছেন। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা হবে।
শিক্ষার্থীদের মতে, “ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চাকরির নিশ্চয়তা না থাকলে ভবিষ্যতে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে। এতে দেশের শিল্পখাত ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং দক্ষ প্রকৌশলীর সংকট দেখা দেবে।”
শিক্ষার্থীরা বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া সকল নন-টেকনিক্যাল ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অপসারণ করতে হবে এবং এই পদ শুধুমাত্র কারিগরি শিক্ষিতদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। এছাড়া, তারা উপসহকারী প্রকৌশলী (১০ম গ্রেড) পদে কেবলমাত্র ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানান, যাতে অন্য কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে এই পদে নিয়োগ না দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মেয়াদ ৪ বছর বহাল রাখা এবং প্রতিটি সেমিস্টারের সময়সীমা ৬ মাস নির্ধারণের আহ্বান জানান, যাতে শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। পাশাপাশি, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংস্কার করে একে সম্পূর্ণ কারিগরি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে পরিচালনার দাবি জানান, যেন কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়।
তারা কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবল নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সংকট দ্রুত দূর করার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের দাবি, উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত চারটি পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শতভাগ আসন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা উচিত, যাতে তারা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার না হন।
শিক্ষার্থীরা দ্রুত রায়ের পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “যদি দাবি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবো। প্রয়োজনে ঢাকা পর্যন্ত লংমার্চ করা হবে।”
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, “ক্রাফট ইন্সট্রাক্টররা মূলত ল্যাব সহকারী, যাদের কারিগরি জ্ঞান নেই। অথচ তাদেরকে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কারিগরি শিক্ষার মান নষ্ট করা হচ্ছে। এটি কারিগরি সেক্টর ধ্বংসের পাঁয়তারা ছাড়া কিছু নয়।”
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, “যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তাহলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে এবং প্রয়োজনে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এলাকা উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
/এমএ