নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানাবিক মূল্যবোধসম্পন্ন টেকসই সভ্যতা বির্নিমাণের আহ্বান জানিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন: স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট প্রজন্ম গড়তে মানবিক মূল্যবোধ, সৃজনশীলতা, আবিষ্কারমনস্কতা ও প্রগতি শীর্ষক দুইদিনব্যাপী কনফারেন্স শেষ হয়েছে।
সম্মেলনে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে নবসৃষ্ট জ্ঞানকে সমাজ ও দেশের কল্যাণে কাজে লাগানোর তাগিদও দেয়া হয়েছে। কনফারেন্সে যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ দেশের নানা জায়গা থেকে দেশবরেণ্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা অংশগ্রহণ করেছেন।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের তৃতীয় তলায় কনফান্সের সমাপনী অধিবেশনের মধ্য দিয়ে কনফারেন্সের পর্দা টানার ঘোষনা দেন কনফারেন্সের চিফ প্যাট্রন ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। একই সঙ্গে আগামী বছর চতুর্থবারের মতো আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।
তৃতীয় আন্তর্জাতিক কনফারেন্স প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, আমরা তৃতীয় আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের একদম শেষ মুহুর্তে এসে উপনীত হয়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই এই মিলনমেলা ভেঙ্গে যাবে। এই কনফারেন্সে যে ধরনের গবেষণা পেপার, তথ্য, উপাত্ত উপস্থাপিত হয়েছে তা সত্যিই অসাধারণ। আমাদের প্রত্যাশা এখানে অংশ নেওয়া প্রত্যেক শিক্ষক, গবেষক এই কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে উপকৃত হবেন।
তিনি বলেন, আমরা স্মার্ট, উন্নত ও মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। তাই এই কনফারেন্স আমাদের সেলক্ষ্য পূরণে ভবিষ্যতে সহায়তা করবে। ‘এক সঙ্গে কাজ করবো/ লক্ষ্য অর্জনে বেশি দূর আগাব’। মূলত এই কনফারেন্স থেকে আমরা সে শিক্ষাটাই পেয়েছি। আমাদের বিগত দুটো কনফারেন্সের চেয়ে এই কনফারেন্স আরও বেশি সফলতার সঙ্গে আয়োজন করতে পেরেছি। এজন্য কনফারেন্সে আগত বিদেশি অতিথি, দেশি-বিদেশী গবেষক, শিক্ষবিদসহ আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকেই আমি ধন্যবাদ জানাই। আগামী বছর এমন একটি কনফারেন্সে আমরা সকলে ফের মিলিত হতে পারবো সেটিই আমাদের প্রতিশ্রুতি, যোগ করেন তিনি।
সমাপনী অধিবেশনে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. পবিত্র সরকার বলেন, দুইদিনব্যাপী এই কনফারেন্সের জ্ঞানের নানা শাখা প্রশাখা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন প্যাারালাল সেশনগুলোতে যে পেপার উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ছিলো অত্যন্ত মানসম্পন্ন। গুণগতমান ও আয়োজনের আন্তরিকতা সবদিক থেকে অন্যতম সেরা কনফারেন্স হিসেবে এই কনফারেন্সটি ভবিষ্যতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
অধিবেশনে ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেম-এর বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর টানইয়েল বি. টাইসি পিএইচ.ডি বলেন, আমি যখন কনফারেন্সে অংশ নিতে আসি তখন একজন আগন্তুক ছিলাম। এই সমাপনী সেশনে এসে বলতে পারি আমি অনেক বন্ধু বানিয়েছি। আদতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে যোগ দিতে পেরে খুব গর্ব অনুভব করছি। একজন গবেষক হিসেবে কনফারেন্সের বিভিন্ন সেশনগুলোতে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আমার জন্য দারুণ স্মৃতি হয়ে থাকবে।
সমাপনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার। স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ড. জিল্লুর রহমান পল। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আয়োজক কমিটির সদস্য-সচিব তানিয়া আফরিন তন্বী। এসময় বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে এবারের আসরের পর্দা নামে।
উল্লেখ্য, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় আন্তর্জাতিক কনফারেন্স নিয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষাবিদ-গবেষকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালগুলো ও বিদেশ থেকে সর্বমোট ২৫০টি পেপার সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য জমা পড়ে। তারমধ্যে ৯৯টি পেপার গৃহীত হয়েছে। ভারত ও সোমালিয়া থেকেই ১৭টি পেপার গৃহীত হয়েছে। দুইদিনব্যাপী কনফারেন্সে বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত প্যারালাল সেশন। এসব সেশনের মধ্য দিয়ে গবেষকরা তাদের গবেষণা পেপার উপস্থাপন করেন।