Site icon জনতার বার্তা | জনগনের পক্ষে, জনতার কথা বলে

ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য…

ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য

ফ্যাসিবাদ বা fasism শব্দটি ইতালীয় শব্দ fascismo fascio থেকে উদ্ভুত। যার অর্থ হলো- লাঠির বান্ডিল। আর fascismo fascio শব্দটি ল্যাটিন fasces থেকে এসছে। যা লাঠির একগুচ্ছ’কে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। যা মূলত একক শক্তি ও কতৃত্বের প্রতীক বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। এই ল্যাটিন শব্দটি ইতালি ভাষায় fascio ব্যান্ড বা গোষ্টি শব্দে পরিণত হয়। ১৯২০ এর দশকে ইতালির রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে fascio শব্দের ব্যবহার জনপ্রিয় হতে থাকে। যা মূলত শক্তিশালি গোষ্টি বা নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। আধুনিক অর্থে fasism বা ফ্যাসিবাদ শব্দটি রাজনৈতিক অর্থে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল ইতালির এক নায়ক বেনিতো মুসোলিনির শাসনামলে। ১৯১৯ সালে মুসোলিনি মিলানে ইতালীয় ফ্যাসিস অব কমব্যাট প্রতিষ্ঠা করেন। যা পরবর্তী দুই বছর পর অর্থ্যাৎ ১৯২৩ সালে ফ্যাসিস্ট পার্টি নামে পরিচিত হয়ে উঠে। এখানে ফ্যাসিজম শব্দটি কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা, এক নায়কতন্ত্র এবং নেতারি প্রতি চরম আনুগত্য প্রকাশের প্রতীক হয়ে উঠে।

ধারণা-
ফ্যাসিবাদ এমন একটি রাজনৈতিক চরমপন্থি মতবাদ যা এক নায়কতন্ত্র, চরম জাতীয়তাবাদ ও সামাজিক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার দমনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। এটি সাধারণত কোন নেতাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে করে এবং রাষ্ট্রের সকল ব্যক্তির অধিকারকে রাষ্ট্রের নেতার স্বার্থের অধিনে রাখে। ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থায় একজন শক্তিশালী নেতা বা দলের নিয়ন্ত্রণে পুরো দেশ শাসিত হয়। এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রোপাগান্ডা এবং সেনাবাহিনীর শক্তি ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে। যাতে কেউ বিরোধীতা না করতে পারে। এই ফ্যাসিবাদের পরিচয় দিতে গিয়ে বিভিন্ন মণীষি একে বিভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। জর্জ অরওয়াল বলেন- ফ্যাসিবাদ হলো এমন এক রাজনৈতিক মতবাদ, যা শক্তি দমন ও ভয় প্রদর্শনের মাধ্যমে জনমত নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সমাজের সকল ক্ষেত্রে এক নায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। লিওনার্ড পিজেট বলেন- ফ্যাসিবাদ হলো একটি সমন্বিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ধ্বংস করে রাষ্ট্রের নেতার প্রভাবকে সর্বোচ্চ করে তুলে। রবার্ট প্র্যাক্সটন বলেন- ফ্রাসিবাদ এমন একটি মতবাদ, যা রাজনৈতিক সহিংসতা, চরম জাতীয়তাবাদ এবং শৃংখলার নামে গণতন্ত্রের বিপরীত দমননীতি চালু করে। হ্যানা আরেন্ট নামের আরেকে তাত্ত্বিক বলেন- ফ্যাসিবাদ হলো টোটালিটারিয়ানিজমের একটি রুপ। যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতার বিনাশ এবং একজন মাত্র নেতার পূজার প্রচলন হয়।

বৈশিষ্ট্য-
যখন কোন একটি দেশ কোন ফ্যাসিস্ট শাসকের দ্বারা শাসিত হয় তখন তার একটি কমন অবস্থা এমন হয় যে, সেখানে কোন প্রতিষ্ঠান তার প্রাতিষ্ঠানিক রুপে বিদ্যমান থাকে না বা থাকতে দেওয়া হয় না। বরং সকল প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙ্গে যায় এবং সেখানে সাংবিধানিক নিয়ম বা আইন কানুনের পরিবর্তে ব্যক্তিতন্ত্র চালু হয়। এই ফ্যাসিবাদের আচরণ বা বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণত সর্বক্ষেত্রেই নিপীড়নমূলক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

একনায়কতন্ত্র-
একনায়কতন্ত্র এমন এক শাসন ব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা একজন নেতা বা একটি নিদ্রিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে থাকে। এই একনায়কতন্ত্রে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং জণগনের স্বাধীন কণ্ঠকে চেপে ধরা হয়। এই ধরণের শাসন ব্যবস্থায় একজন শাসককে স্বৈরাচার হিসেবে সম্বোধন করা হয় এবং এই স্বৈরাচারি ব্যক্তির সিদ্ধান্তকে বা মতামতকে সর্বক্ষেত্রে চুড়ান্ত বলে গণ্য করা হয়। ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, গণতন্ত্রের অভাব, মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকা, শাসকের উপর জোর পূর্বক সর্বক্ষেত্রে নির্ভরশীলতা, ভয়-ভীতি ও প্রোপাগান্ডা ইত্যাদি এর বৈশিষ্ট্য হলেও এই একনায়কতন্ত্রের যে তাত্ত্বিক সুবিধার কথা পাঠ্য বইয়ে আলোচনা করা হয় বাস্তবে তা অন্তঃসারশূণ্য ও মাকালফল। এই একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে একদিকে যেমন ভেঙ্গে ফেলা হয় তেমনি অপরদিকে এখানে নেতৃত্ব বা নেতা তৈরির সমস্ত পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়। মানবাধিকারের চুড়ান্ত লংঘন, বিরোধীমত দমন, দুর্নীতি, একতরফা সিদ্ধান্ত, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি, যুদ্ধ ও সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে এটি একটি রাষ্ট্রকে তার নিজের ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ ক্ষেত্রে পরিণত করে।

ব্যক্তি স্বাধীনতার দমন-
যখন কোন একজন শাসকের মতাদর্শ বা তার কথাকে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বে রাখা হয় বা গুরুত্ব দেওয়া হয় তখন সেখানে বাস্তবে ব্যক্তি স্বাধীনতা বা নাগরিক অধিকার চরম ভাবে ক্ষুন্ন করা হয়। আর তখন মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা অধিকার এবং সমাজে অন্যান্য মৌলিক অধিকারকে অত্যন্ত সীমিত করা হয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করে ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থায় গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়। গণ মাধ্যম ও তথ্যের স্বাধীনতাকে নিষিদ্ধ করে প্রোপাগান্ডার ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের চিন্তা ও বিশ্বাসকে সর্বদা তার নিয়ন্ত্রণে নিতে চেষ্টা করা হয়। শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিজের দলীয় চাচে গঠন করে প্রয়োজনে পাঠ্যপুস্তককে নিজের ব্যানার, পোস্টার বানিয়ে কিংবা সিনেমা, সংবাদপত্র এবং রেডিও চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করে কেবল শাসক গোষ্ঠিরই আদর্শকে প্রচার করা হয়। রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে দমন করে বিরোধী মত বা দলকে নির্মোল কিংবা নিষিদ্ধ করা হলো ফ্যাসিবাদী চরিত্রের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য। কোন ফ্যাসিবাদী দল তার দলীয় আদর্শের বাহিরে অন্য যে কোন আদর্শের নুন্যতম শক্তিশালী মত ও পথকে দাঁড়াতে দেয় না। বরং তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ, প্রয়োজনে নির্বাসনে পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয় এবং এর সবচেয়ে ভয়ংকর রুপ হলো তারা বিকল্প শক্তিশালী অন্যসব ক্ষমতা বা শক্তিকে ধ্বংস করে দেয়। আর সে জন্য কোন ফ্যাসিবাদী দল দীর্ঘস্থায়ি হতে পারে না; বরং তার পতনের ফলে সেই চেইনটা পরিপূর্ণ ভাবে বিকল হয়ে উঠে এবং তার হাল ধরার মতো আর কেউ থাকে না। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদী সরকার সর্বদা সংস্কৃতি, ধর্ম, শিক্ষা ও শিল্পের স্বাধীনতাকে দমন পীড়ন ও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। এজন্য তারা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে গোপন পুলিশ এবং নজরদারীর মাধ্যমে জনগণকে শাসকের প্রতি অনুগত রাখতে বল প্রয়োগ পর্যন্ত করে।

সামরিকীকরণ-
পৃথিবীর সমস্ত ফ্যাসিস্ট নেতা ও তাদের শাসন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে যা দেখা যায় তা হলো সেখানে প্রতিষ্ঠিত ছিল অলিখিত সামরিক শাসন ব্যবস্থা। জনগণের যেহেতু কণ্ঠ স্বাধীনতা ছিল না এবং মৌলিক অধিকার থেকে তারা ছিল বঞ্চিত তাই যখনই কেউ কথা বলার জন্য বা প্রতিবাদ করার জন্য নুন্যতম চেষ্টা করেছিল তখনই তাকে দমন পীড়ন ও গায়েল করা হয়েছিল। আর এগুলো এত বেশি পেশি শক্তির দ্বারা করা হয়েছিল যে, জনগণকে মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া অন্যকোন উপায়ও ছিল না। পৃথিবীর যে সমস্ত ফ্যাসিস্ট দল ও নেতা ছিলেন বিশেষত ইতালির ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট পার্টির বেনিতো মুসোলিনি, অ্যাডলফ হিটলারের জার্মানির নাৎসি পার্টি, ফ্রান্সিকো ফ্রাস্কোর স্পেনের ফ্যালান্জে এস্পানি, জাপানিজ হিদোফি তোগো নামক ফ্যাসিস্ট দল আরো ব্রিগিাদা, পর্তুগিজ ইউনিয়ন, আর্জেন্টাইন নেতা জুয়ান পেরনের ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট পার্টি, ক্রোয়েশিয়ান উস্তাশে, হাঙ্গেরির অ্যারো ক্রস পার্টি, বাংলাদেশের আওয়ামীলীগের শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসন কাল বিশ্লেষণ করলে দেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা সমূহের কাজ ছিল টালমাটাল এক অবস্থা। যেকোন সময় পছন্দমতো কাউকে অন্যকোন বাহিনীতে নিয়োগ প্রদান এবং তার দ্বারা নিজের প্রয়োজনীয় কাজ সমূহ সহজে আদায় করাই ছিল মূখ্য উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে আমরা যা স্বচক্ষে দেখেছি তা হলো সেনাবাহিনীর পছন্দ কোন সামরিক কর্মচারিকে গোয়েন্দা সংস্থার বড় কোন দায়িত্ব দিয়ে তাকে দিয়ে জনগণের কাজকর্ম ও চলাফেরার উপর অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে নজরদারী আরোপ করা, সেনাবাহিনীর কোন ইউনিটকে হঠ্যাৎ করে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে পুলিশ বাহিনীর সাথে জুড়ে দেওয়া এবং আয়না ঘরের মতো বৃহৎ এক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রায় দুই দশক ধরে টিকে ছিল। এই আধুনিক বিশ্বে মধ্যে প্রাচ্য, চায়না, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও আফ্রিকার কিছু দেশ ছাড়া বাকি অধিকাংশ দেশ সমূহে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকলেও বাংলাদেশে প্রায় দীর্ঘ দুই দশক সময় ছিল আশ্চর্য এক গণতন্ত্র। এখানে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে নির্বাচন হতো কিন্তু সেই নির্বাচনে কে জিতবে তা আগে থেকেই ছিল নির্ধারীত। আর এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললেই টুটি চেপে ধরা হতো। আর এতসব জগন্য কাজ রাষ্ট্রের সমস্ত সামরীক বাহিনী সমূহের দ্বারাই সংগঠিত হতো।

স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা-
পৃথিবীর যে কোন দেশ সেটা গণতান্ত্রিক হোক বা অন্যকোন শাসন ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক সেখানে জনগণের জন্য আদালত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষ বিচারপ্রার্থী হবে। আর জনগণ তো সব সময় স্বাধীন, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ অথচ তার পক্ষে বিচারীক রায় প্রত্যাশা করে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার ব্যবস্থায় সব সময় বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং ইচ্ছে করে বিচারিক কার্যক্রমকে দীর্ঘায়িত করা হয়। যেন মানুষ পরাজয় মেনে নেয় এবং বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। বিচারিক কার্যক্রমকে এত বেশি অস্বচ্ছ ও কলূষিত করা হয় যে, স্বাভাবিক ভাবে মানুষ তখন আদালতের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং জুলুমকে অনেক সময় তার ভাগ্যের লিখন হিসেবে মেনে নিয়ে ঘরে ফিরে।

প্রোপাগান্ডা ও জাতি বিভেদ-
পৃথিবীর সমস্ত ফ্যাসিস্ট সরকারেরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে জাতিকে সর্বদা বিভক্ত করে রাখার নজিরই ইতিহাসে পাওয়া যায়। সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে দ্বদ্ব সংঘাত, ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠিকে নিশানা করে ঘৃণা উৎপাদন, সামরিক ও প্রশাসনিক বাহিনী দিয়ে পরিকল্পিত প্রোপাগান্ডার বিস্তার এবং জনগণকে সর্বদা বিভিন্ন ভাবে ব্যস্ত রাখাই ছিল ফ্যাসিস্টদের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশ ঐতিহাসিক ভাবে একটি ধর্মভিরু ও সামাজিক ভাবে সম্প্রীতির দেশ। এখানে যারা এখন পর্যন্ত শাসন কার্য পরিচালনা করেছে তারা ধর্মকে সবচেয়ে বেশি নাড়াচাড়া দিয়েছে। বিশেষত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ধর্ম সমূহকে এখানকার ফ্যাসিস্ট শাসক যেমন- শেখ মুজিবুর রহমান, জেনারেল এরশাদ, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে।

জেনারেল এরশাদ তো সকালে ঘুম থেকে উঠে সংবাদ সম্মেলন করে বলতেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি অমুখ পিরের দরগায় মাজার জিয়ারত করতে গিয়েছি। আর তখনই তিনি তার দলবল সৈন্য সামান্ত নিয়ে চলে যেতেন মাজার জিয়ারতে। (আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, হুমায়ুন আজাদ)

অর্থ্যাৎ প্রোপাগান্ডা তৈরি করে জনগণকে হাসি কান্না, তামাশা আর ফাপা নিরস গল্পে ব্যস্ত রাখাই হলো ফ্যাসিস্টদের এক বড় বৈশিষ্ট্য।

অতীত গৌরব নিয়ে মাতামাতি-
বলা হয়ে থাকে যে, মানুষ তিন প্রকার। প্রথম শ্রেণির মানুষ তারাই যারা ভবিষৎ নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে। নিজেকে, সমাজকে, জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই থাকে তাদের মিশন ও ভিশন। জাতিকে একত্রিত করে কি ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেটাই তাদের চিন্তার মূল উপজীব্য বিষয় হয়ে উঠে। অন্যদিকে যারা দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ, তারা কেবল মানুষ নিয়েই গালগল্প করে। তাদের আলোচনায় কে ভালো আর কে ভালো নয় এসব বিষয়ই মূখ্য হয়ে উঠে। আর যারা তৃতীয় শ্রেণির মানুষ তারা কেবল অতীত নিয়ে দম্ভভরে কথা বলে বেড়ায়। এমনকি এই অতীত নিয়ে রাজনীতি করার জন্য তারা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এসব পর্যন্ত আয়োজন করে বেড়ায়।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শাসক হিসেবে যিনি সবচেয়ে কম বিতর্কীত তিনি হলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি শাসক হওয়ার পূর্বে তাঁর রণাঙ্গনে যুদ্ধ ও সৈনিক জীবনে নেতৃত্ব প্রদান ছাড়া রাজনৈতিক ভাবে দেশ পরিচালনার মতো কোন অতীত অভিজ্ঞতা ছিল না যেটা নিয়ে তিনি গর্ব ভরে প্রচার করে বেড়াবেন। তাই তাঁর সময়ে এই দেশের উন্নয়ন কাজগুলো অনেকটা এজেন্ডা ভিত্তিক সামনের দিকে পর্যায়ক্রমে অগ্রসর হয়েছিল। অন্যদিকে শাসক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ তার সমৃদ্ধ অতীত নিয়েই মাতামাতি এমনকি টিভি, সিনেমা, ডকুমেন্টারি দেশের সর্বত্র তাদের অতীত নিয়েই ছিল এলাহী কান্ড।
ফ্যাসিবাদী সরকারের এক বড় বৈশিষ্ট্য হলো জনগণকে অতীত কর্মকান্ড দিয়ে শান্ত রাখা। জনগণের চাওয়া পাওয়ার দিকে নজর না দিয়ে বরং অতীত কর্ম কান্ডের প্রচার করে জনগণের থেকে অসার প্রশংসা শুনতে তারা বেশি আগ্রহী হয়। আর এই তৃতীয় শ্রেণির মানুষ সর্বদা পরিত্যক্ত ও পরিত্যাজ্য।

সাদিকুর রহমান
সদস্য, আহ্বায়ক কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

Exit mobile version