Site icon জনতার বার্তা | জনগনের পক্ষে, জনতার কথা বলে

দীর্ঘদিন পরে ফের রাজপথে সরব হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম

বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে রাজপথে ফের সরব হচ্ছে দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা ইসলামভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। বিবর্তনবাদ ও ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুর মতো ইসলামবিরোধী সব পাঠ্য সিলেবাস থেকে অপসারণ, শিক্ষানীতি সংশোধন ও ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহারসহ নতুন সাত দফা দাবি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। দাবি না মানলে আবারও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে চায় সংগঠনটি। বিশেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষানীতি সংশোধন না করলে কঠোর আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হেফাজত নেতারা। তারা বলেন, বদ্ধ ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে আর কোনো কর্মসূচি পালন করা হবে না। প্রয়োজনে আবার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে কর্মসূচি পালন করা হবে। দ্রুত বৈঠক ডেকে আলোচনার মাধ্যমে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত রোববার সকালে রাজধানীতে এক শিক্ষাবিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করে হেফাজত। এতে দলের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। হেফাজতের মহাসচিব সাজিদুর রহমান নতুনভাবে সাত দফা দাবি তুলে ধরে হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্য দেন। সেমিনারে হেফাজতের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী বলেন, এই শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ শুধু উদ্বিগ্ন নন, অভিভাবকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। অবিলম্বে শিক্ষানীতির ভুল চিহ্নিত করে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। ওহির শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। কোনো কোনো বক্তা বলেন, আজকে আমাদের বদ্ধঘরে কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে শাপলা চত্বরে আবার কর্মসূচি পালনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পুরানা পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন না মানার ঘোষণা দেন। তিনি শিক্ষাক্রম থেকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব বিষয় বাদ দেওয়ার দাবি জানান। ওই সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে সেমিনার করে হেফাজত।

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী গতকাল সোমবার কালবেলাকে বলেন, আমরা পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা কারিকুলামের ওপর প্রকাশ্যে সেমিনার করে নতুন সাত দাবি তুলে ধরেছি। এগুলো সরকার মেনে নিলেই সংকটের সমাধান হয়ে যায়। আশা করছি সরকার এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগী হবে এবং দাবিগুলো মানবে। তা না হলে হেফাজতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা পরে নতুন সিদ্ধান্ত নেবেন।

কেন্দ্রীয় পদে ফিরছেন মামুনুল হক

তিন বছরের বেশি সময় পর গত শুক্রবার কারামুক্ত হয়েছেন হেফাজতের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। ফলে আর শীর্ষ কোনো নেতা কারাগারে নেই। দু-একজন কর্মী বন্দি রয়েছেন। মামুনুল হককে হেফাজতের কেন্দ্রীয় পদে পুনর্বহাল করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

মামুনুল হককে ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের ১৫ দিন আগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীসহ তাকে অবরুদ্ধ করেছিল স্থানীয়রা। তখন মামুনুল হক দাবি করেছিলেন ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। যদিও পরে জানা যায়, ওই নারী তার স্ত্রী নন। ওই বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর ঘিরে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক সহিংসতায় ২০ জনের মৃত্যু হয়। ওইসময় কেন্দ্রীয় অনেক নেতাসহ সারা দেশে হেফাজতের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব ঘটনায় মামুনুলকে মূল ইন্ধনদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে ২০২৩ সালে হেফাজতের কমিটিতে তাকে কোনো পদ দেওয়া হয়নি। তবে হেফাজতের পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক বৈঠকে ও সভা-সমাবেশে মামুনুল হকসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি দাবি জানানো হয়।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ২২০টির বেশি মামলা হয়েছে, এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬৩টি মামলা হয়েছে। হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদরিস বলেন, গত রোববার শিক্ষা নীতির ওপর সেমিনারে আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে নতুন ৭টি দাবি তুলে ধরেছি। এসব দাবি পূরণে আমরা সরকারকে কোনো সময় বেঁধে দিইনি। আশা করছি হেফাজতের দাবি পূরণের বিষয়ে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। তা না হলে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন।

কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক প্রয়াত শাহ আহমদ শফী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা। ২০১০ সালে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা নীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। যুদ্ধাপরাধের বিচার চলাকালে ধর্ম অবমাননার জন্য মৃত্যুদণ্ডের আইন করাসহ ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করেছিল হেফাজত। ৬ মে রাতে হাজার হাজার নেতাকর্মী মতিঝিলে অবস্থান নিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সেখান থেকে হটিয়ে দেয়। সেসময় অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে হেফাজত দাবি করে আসছে। যদিও কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি।

Exit mobile version