Site icon জনতার বার্তা | জনগনের পক্ষে, জনতার কথা বলে

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিনের ক্ষোভ: “দলে গণতন্ত্র নেই, রাষ্ট্রে কীভাবে চাই?

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিনের ক্ষোভ: "দলে গণতন্ত্র নেই, রাষ্ট্রে কীভাবে চাই?

হাসান আহমেদ প্রান্ত, নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বিএনপির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাব নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না।

সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা বিএনপির উদ্যোগে চাঁদপুর মোহনায় আয়োজিত এক নৌ-বিহারে দেওয়া বক্তব্যে গিয়াস উদ্দিন বলেন, “দল যদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতো, তাহলে হতাশ নেতাকর্মীদের আজ এই কষ্টের কথা বলতে হতো না। যদি নেতা নির্বাচনের ক্ষমতা কর্মীদের হাতে থাকতো, তাহলে নেতারা কর্মীদের মর্যাদা দিতে বাধ্য থাকতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নেতা নির্বাচন হয় না, নেতা ‘নিযুক্ত’ করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সারাদিন রাষ্ট্রের গণতন্ত্র চাই বলে চিৎকার করি, কিন্তু নিজের দলে যদি গণতন্ত্র না থাকে, তাহলে রাষ্ট্রে তা কীভাবে চাই? এটি এক ধরনের ভণ্ডামি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে কেন্দ্র থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে কর্মীরা গোলামের মতো কাজ করতে বাধ্য হন।”

দলীয় নেতৃত্বের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “অ্যাপয়েন্টেড নেতাদের কারণে দলে প্রকৃত নেতাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। দলের মধ্যে নেতা হয়ে গেছেন শাসকের মতো, যেখানে জবাবদিহিতা নেই। তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, লুটপাট করতে পারেন। এই কারণে ভালো মানুষের কোনো জায়গা নেই বিএনপিতে।”

তিনি আরও বলেন, “নেতা নিয়োগ পাওয়ার পর তার বাসায় ফুলের মালা নিয়ে লোকজনের ভিড় জমে যায়। কারণ, সেই নেতা যেহেতু ‘নিযুক্ত’, তাই অনেকে তাকে তোষামোদ করে সুবিধা নিতে চায়। সিনিয়র নেতারাও জুনিয়রদের তোষামোদ করতে বাধ্য হন, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।

গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আজকে আমরা বলি, দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হোক। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মনোনয়ন পেতে হলে কোটি কোটি টাকা দিতে হয়। ভালো মানুষের অভাব নেই বিএনপিতে বা অন্য দলে, কিন্তু টাকা না থাকলে মনোনয়ন পাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে কি এই জন্য দেশ স্বাধীন করেছি?”

নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমি মুক্তিযোদ্ধা। আমি জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি, দেশকে কারও কাছে বন্ধক দেওয়ার জন্য নয়। এই রাজনীতি কারো একক মালিকানা হতে পারে না। আমি সত্য কথা বলেছি, এজন্য যদি বহিষ্কার করা হয়, আই ডোন’t কেয়ার। আমি কারও কাছে মাথা নত করার জন্য রাজনীতি করি না, আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি।”

গিয়াস উদ্দিনের এ বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। দলের অনেক নেতাকর্মী তার বক্তব্যের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করলেও কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে নীরব রয়েছে। তার এই বক্তব্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, সেটি এখন দেখার বিষয়।

/এমএ

Exit mobile version