নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৯ই ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইসমাইল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজুয়ানুল হক, অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ এবং অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর সরকার। অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ।অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ.এফ.এম. আরিফুর রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া নোয়াখালীর শহীদদের পিতামাতারা স্মরনমূলক বক্তব্য রাখেন। নোয়াখালীর প্রথম শহিদ মাহমুদুল হাসান রিজভির মমতাময়ী মাতা অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলের সরকারি চাকরির প্রয়োজন ছিলো না কিন্তু সে কোটা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। রাজধানীর চানখারপুলে আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের গুলিতে মাথা জাজরা হয়ে যায়। আমরা তাঁর লাশ অনেক কষ্ট করে হাতে পাই এবং নোয়াখালী নিয়ে আসি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নোয়াখালীর চাটখিলের শহীদ ইমতিয়াজের বাবা জনাব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, শহিদ ইমতিয়াজ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য প্রথম সারিতে থেকেছে এবং সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। তাদের করা এই স্বাধীন দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জালিমশাহী, ফ্যাসিবাদী, স্বৈরশাসকদের পৈশাচিক খুনের বিচারের লক্ষ্যে অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দরা শহীদদের স্মরণে বক্তব্য রাখেন। এবং সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, দুর্নীতি বিরুদ্ধে অবস্থান করে একটা বৈষম্যহীন দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচকের বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ শহীদদের আত্মত্যাগ এবং তাদের রেখে যাওয়া স্বাধীন দেশকে যে কোনো মূল্যে জালিমদের হাত থেকে রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। দেশের নতুন স্বাধীনতা নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেককে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। মেধাবীদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে৷ শুধুমাত্র একজন ভোটার না হয়ে যদি আমরা একজন যোগ্য নাগরিক হয়ে উঠি তাহলে আমরা আমাদের ভোটের অধিকার যেমন ফিরে পাবো তেমনি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়েও সচেতন হতে পারবো। তরুণরা সচেতন হলে এই তরুণরাই আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় তরুণদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজুয়ানুল হক বলেন, স্বজন হারানোর বেদনার চেয়ে সন্তান হারানোর বেদনা যে কতটুকু কষ্টকর একমাত্র যারা সন্তান হারিয়েছেন তাঁরা বুঝেন। আমরা শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আছি, শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা আমাদেরকে ধরে রাখতে হবে এবং পাশ্ববর্তী দেশের অযথা হস্ত:ক্ষেপ থেকে আমাদের মুক্তি দিবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন- ছাত্র—জনতার অংশগ্রহণে যে জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে, তা ইতিহাসে বিরল।এই আন্দোলনে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকল পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছেন। যার ফলে এই আন্দোলনকে সফল করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সদ্য স্কুল পেরুনো কিশোরী কন্যা, ভার্সিটি পড়ুয়া টগবগে যুবক, ছয়—সাত বছরের নিষ্পাপ শিশু এবং খেটে খাওয়া আমার দিনমজুর ভাই সহ অনেকে। আমরা বিশ্বাস করি, জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নোয়াখালীর যারা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের যারা চাকরি প্রার্থী, আবেদন সাপেক্ষে তাঁদেরকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
অনুষ্ঠানে নোবিপ্রবির পক্ষ থেকে ২৫টি শহীদি পরিবারকে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আহত নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীদেরকেও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
আবদুল্লাহ আল মামুন/এমএ