ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: স্ত্রী, সন্তান, নাতি, নাতনি ও আত্মীয়স্বজন রেখে মহাদেবের সন্তুষ্টি লাভের আশায় ভাত না খেয়ে ২২ বছর ধরে শিবের আরাধনা করেন। থাকেন পুকুর পারের নির্জন এক শ্মশান ঘাটে, ভূতুড়ে বাড়ির সামনে শিবের সাজে।
বলছিলাম ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের কাতিহার বাজার এলাকার ৭৯ বছর বয়সী শ্রী দুলক বর্মন নামে এক পুরোহিতের কথা।
২৭ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিব সাধনায় মহাদেবের সন্তুষ্টি লাভের আশায় ২২ বছর ধরে ভাত না খেয়ে কাতিহার শান্তিপুর মধুপুকুর নামে শ্মশান ঘাটে এক কোণে নিজের হাতে গড়ে তুলা শিব মন্দিরে পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে শিবের সাজে, পায়ে খরম হাতে ত্রিশূল কপালে চন্দন, পড়নে পশুর চামড়া পরে একা নিঃসঙ্গ হয়ে দিনাতিপাত পার করছেনদুলক বর্মন। বিভিন্ন এলাকা থেকে শিবের এই পুরোহিত ভক্তকে দেখতে ছুটে আসেন শিব ভক্তরা। নিয়ে আসেন শিবের জন্য প্রসাদ স্বরূপ ফলমূল।শিবের পূজা শেষে ওই ফলমূল খেয়েই বেঁচে আছেন তিনি।
দুলক বর্মন জানান, মহাদেবের সন্তুষ্টিতে শিবের সাধনায় জীবন সোপে দিয়েছি ২২ বছর ধরে। ভাত খায়না শিবের প্রসাদ খেয়েই বেঁচে আছি।
মন্দিরে অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, নিজের অর্থ দিয়ে যতটুকু পেরেছি তা দিয়ে মন্দির সাজিয়েছি। অনেক সাংবাদিক আসে দেখা করে যায় কিন্তু সরকারি কোন সহযোগিতা পায়না। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে মন্দিরে থাকার এবং শিব ভক্তদের পূজা উদযাপন আরো জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে করতে অনেক সুবিধা হতো।
শিব ভক্ত দুলক বাবুর বড় ছেলে শ্রী টংক নাথ রায় জানান, আমার ছোট বেলা থেকেই বাবা শিবের সাধনায় বাড়ি-ঘর ও পরিবারের মায়া ত্যাগ করে নির্জন পুকুর পারে ছোট্ট একটি ঝোপড়ি বাসায় শিব লিঙ্গ স্থাপন করে দিনাতিপাত করছেন। পরিবারের কোন খোঁজ খবর নেয় না বললেই চলে।শিব ভক্তদের প্রসাদ খেয়েই দিন রাত পার করেন তিনি।ভাত খাওয়া ছেড়েছে ২২ বছর ধরে। আমরা গরীব মানুষ তবুও নিজের স্বার্থ মতো বাবাকে থাকার জন্য ঝোপের আড়ালে শিব লিঙ্গ স্থাপন করে ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। পরকালে শান্তি লভের আশায়, পূজা অর্চনা করেই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার ইচ্ছা আছে তার বাবার। তবে সরকারি কোন সহযোগিতা পেলে মন্দিরের অবকাঠামো নির্মাণ করে শিব ভক্তদের পূজা অর্চনায় আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান তিনি।
এলাকাবাসীরা জানান, প্রতি বছর ফাগুন মাসের শেষের দিকে শিবের নামে মেলার আয়োজন করেন দুলক। ইহকালের জীবনের সুখ শান্তি বিলাসিতার জীবন ত্যাগ করে পরকালের প্রতি বিশ্বাস রেখে শিবের প্রতি আরাধনা করেন তিনি। তার বিশ্বাস শিব একদিন তার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাকে বর দেবে। শিবের দর্শন পাওয়ার জন্যই তার এই আরাধনা।
এ বিষয়ে ৫ নং বাচোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র নাথ বলেন, দুলক বাবুর এই সাধনা ব্যতিক্রম যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।পরকালের শান্তি লাভের আশায় যে কেউ এই সাধনা করতে পারেন, আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে এ ধরনের সাধনা করার বিধান রয়েছে। তবে আমাদের এলাকায় উনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি দীর্ঘদিন ধরে শিবের আরাধনা করে আসছে। অবশ্যই এটি একটি ভালো কাজ।
সরকারি ভাবে কোন সহযোগিতা দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এধরনের কোন সহযোগিতা আমার পরিষদের মাধ্যমে দেয়া হয়নি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম।এটি একটি আধ্যাত্মিক বিষয়। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী যে কেউ এমন সাধন করতে পারে, তবে সবাই পারে না। সরকারি সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু ধর্মীয় অনুভূতির বিষয় রয়েছে সেহেতু আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ/এমএ