মো.এ কে নোমান, নওগাঁ: পবিত্র রমজানে নওগাঁর বাজারে বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও প্যাকেট ও বোতলজাত ভোজ্য তেলের সংকট ক্রেতাদের ভোগান্তিতে ফেলেছে। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, কিছু কোম্পানি কেবল তেল বিক্রি না করে অন্যান্য পণ্যসহ নিতে বাধ্য করছে, ফলে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
একজন ব্যবসায়ী বলেন, “আগে নির্দিষ্ট পরিমাণে তেল নিতে পারতাম, কিন্তু এখন পাইকারি বাজার থেকে তেল আনতে হলে আটা, চিনি বা মসলা নিতে বলা হচ্ছে। এ কারণে তেলের সংকট তৈরি হয়েছে।” দোকানে বোতলজাত তেলের সরবরাহ কম থাকায় ক্রেতারা বাধ্য হয়ে খোলা সয়াবিন তেল কিনছেন, যা ১৭০-১৮০ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে।
রমজানে ইফতারের জন্য তরমুজ, বেল, বরই, পেয়ারার চাহিদা বেশি। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এবার তরমুজের দাম তুলনামূলক কম, প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় অনেকটা কম । তরমুজের আমদানিও ভালো রয়েছে এবার। গুনে মানেও বেশ ভালো । এদিকে, বেল প্রতি পিচ ৪০-৮০ টাকা, বরই ৬০-৮০ টাকা, পেয়ারা ৫০-৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
একজন ক্রেতা বলছেন, এমনি থেকে বাজারের নিত্যপণ্য জিনিসের দাম স্বাভাবিক থাকলেও। বাজারের ভোজ্য তেল সংকট আছে বলে আমি মনে করি। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে সবকিছুই স্বাভাবিক হবে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম ন্যায্য মূল্যে পাওয়া যাবে।
গুড়ের দাম ১২০ টাকা কেজি, যা ৫-১০ টাকা বেড়েছে। একজন গুড় বিক্রেতা বলেন, “রমজানে আখের ও দানাদার গুড়ের চাহিদা বেশি থাকে, তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় খুব বেশি বাড়েনি।” চিনিও ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ।
গরুর মাংসের দাম কিছুটা বেড়ে ৭৫০ টাকা কেজি হয়েছে, যা কিছুদিন আগে ৬৫০ টাকা ছিল। দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, পাতিহাঁস ৪০০-৪৫০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ২৮০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১৮০-২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
একজন গরুর মাংস বিক্রেতা বলেন, “গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে, খামারিরাও বেশি দামে গরু বিক্রি করছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।”
একজন গরুর মাংস ক্রেতা বলেন, “আগেও ৭০০ টাকা দিয়ে কিনেছি, এখনো সেই দামই আছে। আগে দরদাম করা যেত, এখন ব্যবসায়ীরা এক টাকাও কমতে রাজি নয়।”
ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিমের দাম কিছুটা কমলেও ক্রেতারা সন্তুষ্ট নন। মুরগির ডিম ১০ টাকা পিস, হাঁসের ডিম ৬৫-৭০ টাকা হালি, কোয়েল ডিম ২.২০ টাকা পিস দরে বিক্রি হচ্ছে।
ছোট মাছের চাহিদা বেশি থাকলেও দাম ওঠানামা করছে। চিংড়ি ৮০০ টাকা, শোল ৭০০-৮০০ টাকা, কই ও শিং ৫৫০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় মাছ পাইকারি পর্যায়ে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি হলেও খুচরায় ৫০০-৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
একজন মাছ বিক্রেতা বলেন, “মাছের দাম নির্ভর করে আমদানি ও চাহিদার ওপর। আজকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে কিনেছি, বিক্রি করছি ৩৬০ টাকায়। কিন্তু ক্রেতারা দরদাম করেই যাচ্ছে।”
একজন মাছ ক্রেতা বলেন, “বড় মাছ কিনতে গেলে ১০ টাকা কম চাইলে বিক্রেতারা দিতে চায় না। দরদাম করার সুযোগ খুব কম। আগের মতো আর বাজারে দরদাম করা যায় না, ব্যবসায়ীরা একরকম জোর করেই বেশি দামে বিক্রি করছে।”
চালের বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল রয়েছে। কাটারি-এলসির দাম ৭৫ টাকা, দেশি কাটারি ৭৩-৭৫ টাকা, শটিং কাটারি ৭৬-৮০ টাকা, জিরাশাইল ৭০-৭৫ টাকা, চিনি আতপ ১০০-১১০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫-৫৬ টাকা, রঞ্জিত ৫৮-৬০ টাকা এবং ঊনপঞ্চাশ চাল ৬০-৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাল বিক্রেতারা জানান, “রমজানে চালের চাহিদা বাড়লেও দাম আগের মতোই রয়েছে। তবে পাইকারি বাজারের ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে পরিবর্তন হতে পারে।”
বাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম সহনীয় থাকলেও, প্যাকেট ও বোতলজাত ভোজ্য তেলের সংকট ক্রেতাদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। গরুর মাংস, ডিম ও কিছু ফলের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে চাল, গুড় ও চিনির দাম এখনো নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাজারের ওঠানামা অব্যাহত রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশাবাদী, রমজানের মধ্যভাগে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কিছুটা সহনীয় হতে পারে।
/এমএ