মো.এ কে নোমান, নওগাঁ: ঈদের উৎসব মানেই সাজগোজ, আনন্দ আর নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার আনন্দ। সেই আনন্দকে আরও বর্ণিল করে তুলতে নওগাঁ উদ্যোক্তা গ্রুপের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ঈদ মেহেদী উৎসব ২০২৫। শনিবার (২৯ মার্চ) নওগাঁ বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের মুক্তমঞ্চ প্রাঙ্গণে সকাল ১০:৩০টা থেকে বিকেল ৫:০০টা পর্যন্ত চলে এই জমকালো আয়োজন।
উৎসবে নওগাঁর দক্ষ মেহেদী শিল্পীরা নতুন নতুন ডিজাইন ও সৃজনশীলতার সংমিশ্রণে নারীদের হাত রাঙিয়ে তোলেন। কম খরচে মানসম্মত ও অর্গানিক মেহেদী ব্যবহারের সুযোগ থাকায় নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে মেহেদীর এই উৎসবে অংশ নেন। শুধু মেহেদীই নয়, এখানে ছিল কেক, কসমেটিকস এবং ফ্যাশনেবল পোশাকের স্টল, যা পুরো আয়োজনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
উৎসবের অন্যতম আয়োজক নাবিলা জামান নিরু বলেন, “প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদকে সামনে রেখে আমরা এই উৎসবের আয়োজন করেছি। নারীদের কাছে মেহেদী কেবল একটি শৈল্পিক নকশা নয়, বরং এটি আবেগের বহিঃপ্রকাশ। তাই মানসম্মত ও অর্গানিক মেহেদী দিয়ে সবার হাত রাঙানোর সুযোগ তৈরি করাই আমাদের উদ্দেশ্য।”
মেহেদী আর্টিস্ট কাজী জাকিয়া আক্তার জেরিন বলেন, “এই উৎসবে আমাদের দক্ষ মেহেদী শিল্পীরা নতুন ডিজাইন নিয়ে এসেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি ট্রেন্ডি এবং ঐতিহ্যবাহী নকশার সমন্বয়ে সবার পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে, যাতে অংশগ্রহণকারীরা সেরা অভিজ্ঞতা পান।”
উৎসবে বিভিন্ন ধরনের মেহেদী লাগানোর সুযোগ ছিল। নন-ব্রাইডাল মেহেদী ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে, সেমি-ব্রাইডাল মেহেদী ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে, ব্রাইডাল মেহেদী ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় লয়াল ব্রাইডাল মেহেদী ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেছে।
এছাড়া, শুধুমাত্র অর্গানিক মেহেদী বিক্রিও করা হয়, যেখানে ১৭ গ্রাম ৬০ টাকায়, ২০-২২ গ্রাম ৮০ টাকায় এবং ২৫-২৮ গ্রাম ১০০ টাকায় পাওয়া গেছে। এতে করে যারা বাসায় নিয়ে গিয়ে নিজে মেহেদী লাগাতে চান, তারাও উৎসব থেকে কেনার সুযোগ পেয়েছেন।
ক্রেতারা জানান, উৎসবে একসঙ্গে অনেক মেহেদী ডিজাইনার থাকায় নিজের পছন্দমতো ডিজাইন করানোর সুযোগ পেয়েছেন, যা অন্য কোথাও এত সহজে সম্ভব নয়। পাশাপাশি, অর্গানিক মেহেদীর ব্যবহার হওয়ায় ত্বকের কোনো ক্ষতি হওয়ার ভয় নেই। তাছাড়া এখানে পোশাক, কেক ও কসমেটিকসের স্টলও ছিল, যা ঈদের প্রস্তুতিকে আরও সহজ ও উপভোগ্য করে তুলেছে।
এই উৎসব শুধুমাত্র মেহেদীপ্রেমীদের জন্য ছিল না, বরং এটি ঈদের আগে কেনাকাটা ও সৌন্দর্যচর্চার একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। মেহেদী ডিজাইন থেকে শুরু করে কসমেটিকস, পোশাক ও খাবারের স্টল—সব মিলিয়ে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ঈদ প্রস্তুতির আয়োজন ছিল।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উৎসবের আয়োজন নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের জন্য নির্দিষ্ট কিউ ব্যবস্থা রাখা হয়, যাতে সবাই নির্বিঘ্নে মেহেদী লাগাতে পারেন। এছাড়া, বিশেষ ছাড় ও অফারের মাধ্যমে ক্রেতাদের জন্য কেনাকাটাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছিল।
ঈদের আনন্দকে আরও রঙিন করতে এই মেহেদী উৎসব যে অনন্য মাত্রা যোগ করেছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই আগামী বছরও এমন আয়োজনের প্রত্যাশা করেছেন নওগাঁর মেহেদীপ্রেমীরা।
/এমএ