মো. এ কে নোমান, নওগাঁ: “মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা”—এই স্লোগানে নানা রঙে, নানা সাজে, নওগাঁয় উদযাপিত হলো বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বর্ষবরণে আনন্দ শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও গ্রামীণ মেলার মধ্য দিয়ে সোমবার (১৪ এপ্রিল) ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে নওগাঁবাসী।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৮টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের এটিম মাঠ থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা। এতে নেতৃত্ব দেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের পরনে ছিল রঙিন বাহারি পোশাক, মুখে মুখে ছিল বাংলা নববর্ষের গান, আর হাতে ছিল বেলুন, ফেস্টুন, ব্যানার, মাথাল ও গ্রামীণ জীবনের প্রতীক নানা সামগ্রী। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি, পালকি, ঘোড়া, মাটির হাড়ি-পাতিল, নকশাকাটা হাতপাখা, মুখোশ—সব মিলিয়ে পুরো শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বৈশাখী রঙ।
শোভাযাত্রায় জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ারসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই আয়োজন হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও আবেগঘন।
শোভাযাত্রা শেষে বিয়াম স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেয় জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। পরিবেশিত হয় বাংলা নববর্ষের গান, লোকনৃত্য, কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্যনাট্য। উৎসবপ্রাঙ্গণ পরিণত হয় হাজারো মানুষের মিলনমেলায়।
এছাড়া দিনব্যাপী সেখানে বসে বৈশাখী মেলা। গ্রামীণ হস্তশিল্প, মাটির তৈরি খেলনা, মুখরোচক খাবারের দোকান, মোরগ ধরা, সুই’য়ে সুতা লাগানো, কলা গাছে ওঠা প্রতিযোগিতা সহ নানা আয়োজন ছিল শিশু-কিশোর ও বড়দের আনন্দে মাতানোর জন্য।
এভাবেই রঙে, সুরে ও ঐতিহ্যে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে নওগাঁবাসী, যেখানে ছিল সকল বয়সী মানুষের প্রাণের মিলন।
/এমএ