সিয়াম রহমান, ঈশ্বরদী প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদীর চররূপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেন এখন শিক্ষার বদলে আতঙ্কের নাম। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পারভেজ রেজার বিরুদ্ধে ওঠা একের পর এক অভিযোগে বিপর্যস্ত পুরো শিক্ষার পরিবেশ।
অভিযোগের তালিকায় রয়েছে অফিস রুমে ধূমপান, অবৈধ ভর্তি ফি আদায়, প্রত্যয়নপত্র বাণিজ্য, বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ, শিক্ষক হয়রানি, এমনকি শিক্ষার্থীদের দিয়েও টয়লেট পরিষ্কার করানো। সব মিলিয়ে বিদ্যালয়টি যেন শিক্ষার বদলে অন্য কিছুর কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ৫ মে বিদ্যালয়ের সাতজন সহকারী শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৩ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক পারভেজ রেজা বিদ্যালয়ের পাশে চায়ের দোকানে বসে সিগারেট টানছেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তখনই স্কুলে আসেন তিনি।
সহকারী শিক্ষক লতিফা বেগম, শারমিন আক্তার, আয়েশা খাতুন, আরিফা খাতুন, খাদিজা আক্তার, সেকেন্দার আলী ও রবিউজ্জামান বলেন, “প্রধান শিক্ষকের অব্যবস্থাপনা, হুমকি ও অপমানজনক আচরণে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।”
একাধিক শিক্ষক জানান, পারভেজ রেজা স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় সবসময় ক্ষমতার দাপট দেখান। এমনকি নামাজ রুমে শিক্ষিকারা বিশ্রাম নিতে গেলে তিনি জানালা-দরজায় উঁকিঝুঁকি দেন। আপত্তি জানালে গালিগালাজ করেন।
অভিভাবকরাও অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের টিউবওয়েল ও টয়লেট নষ্ট, বরাদ্দকৃত সংস্কার বাবদ অর্থের কোনো হদিস নেই। জাতীয় দিবসের পুরস্কারের বদলে কর্নারের বই-ক্রেস্ট শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে ফটোসেশন করে তা আবার ফেরত নিয়ে যেতেন প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষার্থীদেরও অভিযোগ, তাদের দিয়ে জোর করে বিদ্যালয় পরিষ্কার করানো হয়, এমনকি অফিস রুমও। কেউ অস্বীকৃতি জানালে বাজে ভাষায় বকাবকি করেন তিনি।
এই সবের প্রমাণ দেখানো হলেও পারভেজ রেজা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। অথচ তার অতীতও কম কলঙ্কিত নয়, ২০০৬ সালে বাঘইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বদলি হন তিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের এক সাবেক সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার দুর্নীতির বিষয়ে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, কেউ আমলে নেয়নি।
বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এবার যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে আমরা কর্মবিরতিতে যাব।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাহানা আক্তার জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
/এমএ