বুধবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫
spot_img

নানা নাটকীয়তা পিছিয়ে এসেছে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’

মধ্যরাত পর্যন্ত নাটকীয়তা এবং পর্দার আড়ালে রাজনৈতিক টানাপোড়েনে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ থেকে পিছিয়ে এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্তর্বর্তী সরকারই জাতীয় ঐকমত্যে ঘোষণাপত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘোষণাপত্র দিতে না পারলেও আজ মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ নামে জমায়েত হবে। দেওয়া হবে ঘোষণাপত্রের প্রস্তাবনা।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐকমত্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন। রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোকে নিয়ে এ ঘোষণা দেওয়া হবে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিএনপির চাপেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাই শহীদ মিনার থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ সমর্থন করেনি।

শেখ হাসিনার পতন ঘটানো অভ্যুত্থানের সূত্রপাত করা ছাত্রনেতৃত্ব শহীদ মিনারে লাখো মানুষের সমাগম ঘটিয়ে রাজনৈতিক শক্তিও দেখাতে চেয়েছিল। সূত্রগুলো জানিয়েছে, অন্য একটি দলের এতে ইন্ধন রয়েছে সন্দেহে এ চেষ্টাকে ভালোভাবে নেয়নি বিএনপি। ফলে সরকার এবং অন্যরাও সমাবেশে সহযোগিতা করা থেকে পিছিয়ে যায়। পরে ছাত্রনেতৃত্বের মুখ রক্ষায় ‘সমঝোতা’র অংশ হিসেবে সরকারই ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেয়। 

সরকারের এ উদ্যোগে স্বস্তি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল রাতে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিও বৈঠকে বসে। দলটির আশঙ্কা ছিল, অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সংবিধান স্থগিত বা বাতিলের চাপ তৈরি করা হতে পারে। বিএনপি বিদ্যমান সংবিধান বহাল রেখে দ্রুত নির্বাচন চায়। 

গতকাল সোমবার রাত পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর বাংলমটরে সংগঠনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ জানান, ঘোষণাপত্র প্রকাশ না হলেও জমায়েত হবে। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের কারণে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা যাচ্ছে না। কফিনে শেষ পেরেক মেরেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে মঙ্গলবার ছাত্র-জনতার জমায়েত হবে শহীদ মিনারে।

গত শনিবার ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ৩১ ডিসেম্বর (আজ) শহীদ মিনার থেকে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হবে বলে জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। পরদিন শফিকুল আলম বলেছিলেন,  ছাত্রদের এ উদ্যোগে সরকারের সম্পৃক্ততা নেই। একে বেসরকারি উদ্যোগ হিসেবেই দেখতে চায় সরকার।

মঙ্গলবারের ঘোষণা ঘিরে দেশব্যাপী নানা আলোচনা ও উত্তেজনার মাঝেই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শফিকুল আলম বলেন, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্রটি প্রস্তুত করা হবে। এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিত, ঐক্যের ভিত্তি ও জনগণের অভিপ্রায় ব্যক্ত হবে। আমরা আশা করছি, সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যে সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত এবং জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।

সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর সমাবেশ হবে কিনা– তা নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। চার ঘণ্টায় দফায় দফায় বৈঠকের পর আবদুল হান্নান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ঘোষণাপত্র দিতে রাষ্ট্রকে বলেছিলাম সহায়তা দিতে। সব রাজনৈতিক দলের কাছে গিয়েছি। বলেছি, যেন প্রত্যেকে এটা গ্রহণ করে। কারণ ঘোষণাপত্র একটি ঐতিহাসিক দলিল হবে। কিন্তু এই ঐতিহাসিক দলিল যেন আমরা প্রস্তাব করতে না পারি, সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে।’

রাত ১২টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ কয়েকজন নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে আসেন। তখন সিদ্ধান্ত হয়, ঘোষণাপত্র প্রকাশ হবে না। তবে বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন যেহেতু রওনা হয়েছেন, তাই শহীদ মিনারে সমাবেশ হবে।

রাত দেড়টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার পুরো বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ জায়গায় এনেছে। একে সাধুবাদ জানাই।

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর