মিজানুর রহমান রিয়াদ: রহমত নাজাত ও মাগফেরাতের মাস মাহে রমজান। মুমিন হৃদয় উচ্ছ্বসিত হয় এ মাস পেয়ে। এই মাস পাওয়ার জন্য নবী কারিম ﷺ দু মাস আগে থেকেই দোয়া করতেন। তিনি বলতেন; ” اللهم بارك لنا في رجب و شعبان و بلغنا رمضان”
এ মাসে বান্দা নেকির পাহাড় গড়ে তুলবে। বর্জন করবে যত গোনাহের কাজ। অন্তর থেকে দূর হবে পাপের কালিমা। মুমিনহৃদয় ফিরে আসবে রবের দিকে। রব এবং বান্দার মাঝে গড়ে উঠবে প্রেমের এক অতুলনীয় সম্পর্ক!
তো এই মহান বরকতময় মাস আমরা কিভাবে কাটাবো! কিভাবে রবের নৈকট্য অর্জন করবো তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করছি ইনশাআল্লাহ।
১. রমজান মাসের রোজা রাখা: প্রত্যেক সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক, বুদ্ধিমান বিবেকসম্পন্ন লোকের উপর রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ তা’ আলা কোরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন; يٰٓـاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا كُتِبَ عَلَيۡکُمُ الصِّيَامُ کَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَۙ ( সুরা বাক্বারা-১৮৩)
অর্থ : হে ইমানদারগণ তোমাদের উপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে; যেমনভাবে ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর। যেনো তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।
২. সাহরী খাওয়া: সাহরী বরকতময় খাবার। কেননা নবী কারিম ﷺ বলেন , ‘‘তোমরা সেহরী খাও। কারণ, সেহরীতে বরকত আছে।’’( বুখারী ১৮২৩, মুসলিম ১০৯৫নং)
‘‘তোমরা সেহরী খেতে অভ্যাসী হও। কারণ, সেহরীই হল বরকতময় খাদ্য।’(আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ)
তা ছাড়া শারীরিক উপকারিতা তো রয়েছেই। তবে সাহরী খাওয়া ছাড়াও রোজা হয়।
৩.বেশি বেশি দান ছদকা করা: রমজান মাসে যেহেতু সব আমলের সাওয়াব বেশি সেই হিসেবে দান ছদক্বাও বেশি পরিমাণে করা উচিৎ। এতে বেশি বেশি সাওয়াব হাছিল করা যাবে।
৪. কোরআনুল কারিমের তেলাওয়াত: রমজান মাস কোরআন নাযিলের মাস। আল্লাহ তা’আলা বলেন (شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ..) ” এটাই রমযান মাস যে মাসে কোরআন নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং বছরের অন্যান্য দিনগুলোর থেকে এ মাসে কোরআন তেলাওয়াত বাড়ানো উচিৎ। যেনো আমরা রবের নৈকট্য অর্জন করতে পারি।
৫.রোযাদারকে ইফতার করানো: রমজান মাসে ইফতার করা এবং করানো উভয়টাই পূণ্যের কাজ। কোনো ব্যাক্তি যদি রোজাদারদের ইফতার করায় তাহলে রোযার পরিমাণ সাওয়াব তার আমলনামায় দেওয়া হয়। কেননা রাসূল সা. ইরশাদ করেন, কোনো রোজাদারকে যে লোক ইফতার করায় সে লোকের জন্যও রোজা পালনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। কিন্তু এর ফলে রোজা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দু পরিমাণ কমানো হবে না। (সুনানে তিরমিজি-৮০৭)।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নফল নামাজ, যিকির আযকারের দিকে আমাদের বিশেষভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ।
রমজান মাসে যেমনভাবে ইবাদাতের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ, তেমনিভাবে বিভিন্ন ধরনের গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। কেননা গোনাহ্ রমজানের বরকত নষ্ট করে দেয়। যেমন :-
১. গীবত থেকে বেঁচে থাকা: গীবত একটি মারাত্মক গোনাহের কাজ। যা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার শামিল। রোজা থাকা অবস্থায় এ ধরনের গোনাহ থেকে আমাদের বেঁচে থাকা জরুরি। শুধু রোজা নয় সর্বাবস্থায় আমাদের গীবত থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
২. মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা : কেননা মিথ্যা সকল গোনাহের মূল। তাই সর্বাবস্থায় মিথ্যাকে পরিহার করতে হবে।
তাছাড়া যত ধরনের গোনাহ রয়েছে সবগুলো থেকেই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। তাহলেই আমাদের রোজা রাখা সার্থক হবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে ভরপুর কামিয়াবি দান করুন। আমিন।
/এমএ