সোমবার, মার্চ ২৪, ২০২৫
spot_img

অবশেষে অপসারণ হচ্ছে সড়কের পাশে থাকা ম’রা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ

জেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরায় দীর্ঘদিনের দাবির পর অবশেষে আন্তঃ জেলা সড়কের দুই ধারের মরা, বৈদ্যুতিক তারের সাথে যুক্ত থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ক গাছ কাটা শুরু হয়েছে। সদর উপজেলার আমনুরা থেকে গোদাগাড়ী সড়কের ২৫৮টি গাছ নিলামে বিক্রি করেছে জেলা পরিষদ৷ প্রতিনিয়ত মরা গাছ পড়ে সড়ক দুর্ঘটনা, আবাসিক ভবনের উপর থাকা গাছের ডালপালা পড়ে আহত হওয়া ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটার পর দীর্ঘদিন ধরেই মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ এসব গাছ কাটার দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা। এদিকে, রাস্তার দুই ধারের ফাঁকা জায়গায় ব্যাপকহারে বনায়নের পরিকল্পনা রয়েছে জেলা পরিষদের।

জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছিলেন পথচারীরা। কারন ১৯৮৭ সালের দিকে রোপন করা এই সড়কের দুই ধারে থাকা গাছের অনেকগুলোই মরা ও শুকনো। বিভিন্ন সময়ে এসব গাছ ও গাছের অংশ সড়কে পড়ে আহত হয় পথচারীরা। এছাড়াও সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এমনকি গত ৩ বছর আগে এই সড়কে বাতাসে গাছ পড়ে এক নারীর প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

এই সড়কের আমনুরা এলাকায় বেশিরভাগ গাছই আবাসিক এলাকায় থাকা বাসার উপর, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারের মধ্য দিয়ে গেছে। এতে নানারকম দূর্ঘটনার শঙ্কা ও আতঙ্ক নিয়ে দিন পার করছিলেন সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আমনুরা এলাকার বাসিন্দারা। এর প্রেক্ষিতেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দপ্তরের মাধ্যমে আমনুরা-গোদাগাড়ী সড়কে থাকা মরা, শুকনো ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের দাবি জানায় তারা।

জানা যায়, স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের অসুবিধা ও আশঙ্কার কথা চিন্তা করে গতবছরের ১১ সেপ্টেম্বর আমনুরা হতে ঝিলিম বাজার হয়ে কেন্দুল পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে মরা, আধামরা, বিদ্যুতের লাইনের নিচে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ব গাছ অপসারণের জন্য পত্র অনুরোধ করে ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদ। ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম লুৎফুল হাসান সাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, এসব মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছের কারনে ইতোপূর্বে দূর্ঘটনা ঘটেছে, এমনকি বর্ষা মৌসুম আসলে ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। তাই গাছগুলো অপসারণের জন্য জরুরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও ইউনিয়ন পরিষদের অনুরোধের পর দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে সড়কের দুই পাশে থাকা মরা, ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ক গাছ নিলাম করে অপসারণ করছে জেলা পরিষদ। ৩২ লাখ টাকায় ২৫৮টি মরা, ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ব গাছ বিক্রি করেছে জেলা পরিষদ। ইতোমধ্যেই গাছ কাটা ও অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। যা আসন্ন বর্ষার আগেই সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। বর্ষার আগেই গাছ অপসারণ হওয়ায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা।

গত তিন বছর আগে আমনুরা শুকনাদিঘী এলাকার আব্দুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের মৃত্যু হয় সড়কে থাকা মরা গাছ পড়ে। নিহত আনোয়ারা বেগমের মেয়ে আসমা খাতুন জানান, বাতাস উঠেছিল তাই বাইরে গরু আনতে যান আনোয়ারা বেগম। এসময় হঠাৎ করেই একটি মরা গাছের অংশ পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

আমনুরা মুন্সিপাড়া এলাকার মনিমুল হক তুফান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এসব গাছ মরা অবস্থায় সড়কের দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে। হরহামেশায় ঘটে নানারকম দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। প্রতিনিয়ত শঙ্কা নিয়ে চলাফেরা করতে হতো এই সড়ক দিয়ে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর জেলা পরিষদ এমন উদ্যোগ নেয়ার কারনে শঙ্কামুক্ত হতে পেরেছে এই রাস্তার পথচারীরা।

টংপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম জানান, আমরা গোদাগাড়ী সড়কের কাজগুলো প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বছর আগের লাগানো। এর বেশিরভাগ গাছই পরিপক্ক হয়েছে। এমনকি অন্যান্য গাছগুলোও মরেছে, কিছু আধামরাও হয়েছে। এলাকায় বিভিন্ন দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা এসব গাছগুলো দীর্ঘদিন ধরে অপসারণের দাবি জানি আসছি। মরা গাছ পড়ে আহত হওয়ার পাশাপাশি মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

আমনুরা চান মুন্সিপাড়ার রুমি খাতুন জানান, বাড়ির উপরে থাকা এসব গাছ ঝড়ের সময় গালপালা পড়ে যেকোন বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে সবসময়ই। প্রতিনিয়ত ছেলে মেয়েদের নিয়ে আতঙ্কে থাকি। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের সময়ে আতঙ্কের পরিমাণ বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

মো. পাতুল নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, জেলা পরিষদ পরিপক্ব, মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণ করছে, তা আমাদের জন্য ভালো। কিন্তু গাছগুলো অপসারণের পর যেসব ফাঁকা জায়গা তৈরি হবে তাতে আরো কয়েক গুন গাছ লাগানোর দাবি জানায়। কারণ গাছ আমাদের বন্ধু এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম লুৎফুল হাসান বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদকে ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো কেটে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। পত্র দেয়ার দীর্ঘ সময় পরে হলেও জেলা পরিষদ এই কাজগুলো অপসারণের উদ্যোগ নেয়। তবে সড়কে থাকা সবগুলো গাছ অপসারণ করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র মরা, আধামরা, শুকনো ও পরিপক্ক গাছগুলো অপসারণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনকি এসব কাজগুলো চিন্তিত করার সময় ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যরা উপস্থিত থেকে শুধুমাত্র মরা ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ক গাছগুলো চিহ্নিত করেছে।

জানা যায়, সড়কের পাশে থাকা মরা ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ষ গাছগুলো অপসারণের জন্য ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর জেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় প্রস্তাব ও অনুমোদন করা হয়। এরপর রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর ২৫৮টি মরা ঝুঁকিপূর্ণ ওপরিপক্ক গাছের মূল্য এ ধরনের জন্য অনুরোধ করে জেলা পরিষদ। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারী জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় তা অনুমোদন দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১৩ ফেব্রুয়ারি গাছগুলো নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা পরিষদ। পরে সর্বোচ্চ দরপত্র দাতা ব্যক্তির কাছে গাছগুলো বিক্রি করে জেলা পরিষদ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফাজ উদ্দীন জানান, স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে নিলামে অংশ নেয়া সর্বোচ্চ দরদাতাদের নিকট ২৫৮টি মরা, ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ক গাছ বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে স্থানীয় বাসিন্দা এবং ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের উপস্থিতিতে এসব গাছ চিহ্নিত করা হয়।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব রুহুল আমিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এসব মরা, ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ক গাছ অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু বিভিন্ন প্রক্রিয়া করতে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে। তবে যেসব জায়গার গাছ অপসারণ করা হয়েছে সেখানে কয়েকগুণ বৃক্ষরোপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আমনুরা-গোদাগাড়ী সড়কসহ কয়েকটি সড়কে চলতি বছরে ১০ হাজার বৃক্ষরোপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

হানিফ মেহমুদ/এস আই আর

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর