চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্কুলছাত্রীর সাথে পরকীয়ার জের ধরে ও যৌতুক না পেয়ে স্ত্রী ও শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে। এনিয়ে আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নারী। এমন অবস্থায় ৫ বছরের শিশুকে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের পীরগাছি গ্রামের মো. শফিকুল ইসলামের মেয়ে মোসা. সোনিয়া খাতুন (২৫)।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ০৬ অক্টোবর সোনিয়া খাতুনের সাথে শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের গুপ্তমানিক গ্রামের মো. আব্দুল লতিফের ছেলে মাসুম আহম্মেদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ১ লাখ টাকা যৌতুক, পরবর্তীতে বাড়ি করার জন্য ২ লাখ, ধার হিসেবো ১৫ হাজার, একটি ছাগল, একটি গরু ও ৪ আনা ওজনের একটি আংটি এবং ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র নেয়। সংসার চলাকালীন সময়ে হঠাৎ চলতি বছরের জানুয়ারীতে আরও ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন ধাইনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক মাসুম আহম্মেদ।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, যৌতুকের ৩ লাখ টাকা না দিলে সংসার না করার হুমকি দিলে আদালতে মামলা দায়ের করেন সোনিয়া খাতুন। পরবর্তীতে সমাধান করার কথা বলে আদালতে জামিন নিলেও তা না করার বাধ্য হয়েই আরেকটি মামলা দায়ের ভুক্তভোগী নারী।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী সোনিয়া খাতুন বলেন, আমার সাথে সংসার করা অবস্থাতেই সে (মাসুম আহম্মেদ) ধাইনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়েছে। আর এতেই দীর্ঘদিন ধরেই আমার উপর নির্যাতন বাড়াতে থাকে। আমাকে ৩ লাখ টাকা যৌতুকের চাপ দেয়। আমার পরিবার এক লাখ টাকা দিতে রাজি হলেও সে তার সীধান্তে অটল থাকায় ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে গত ১ বছর ধরে আমি বাবার বাসায় অবস্থান করছি। মিমাংসা করার শর্তে জামিন নিলেও পরে আর কোন সমাধান করতে রাজি হননি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মেয়েকে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছি। তবুও পরকীয়া প্রেমে এতোটাই মগ্ন যে আমাদের দু:খ-দুর্দশা কর্নপাত করছে না। আদালতে মামলা করার পাশাপাশি জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা ও শাস্তির দাবি জানায়।
সোনিয়া খাতুনের বাবা শফিকুল ইসলাম জানান, বিয়ের পর গত ৭-৮ বছরে দফায় দফায় যৌতুকের টাকা দাবি করে তা নিয়েছে জামায় মাসুম আহম্মেদ। মেয়ের সুখ ও সংসারের কথা ভেবে ঋণ ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে তাকে যৌতুকের টাকা দিয়েছি। কিন্তু পরকীয়ার কারনে ও তার দাবিকৃত ৩ লাখ টাকা দিতে না পারায় মেয়ে ও নাতনীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষকরা নাম-পরিচয় না দেয়া শর্তে জানান, মাসুম আহম্মেদ ধাইনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে চাকুরি করে। কিন্তু স্ত্রী সংসার থাকা স্বত্বেও স্কুলছাত্রীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়েছে সে। তার কারনে বিদ্যালয়টির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এনিয়ে চারদিকে অনেক বদনাম হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের।
তবে পরকীয়ার কথা অস্বীকার করে ধাইনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক মাসুম আহম্মেদ বলেন, ডিম ভাজাকে কেন্দ্র করে পারিবারিক বনিবনা না হওয়ায় বিরোধ তৈরি হয়। আদালতে এনিয়ে মামলা চলমান আছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও আমাকে ফোন দিয়ে সমাধান করার জন্য বলেছেন। আমি সোনিয়া খাতুনের সাথে সংসার করতে চাই। আশা করি, একটি সুষ্ঠ সমাধান হবে।
এবিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহা. আব্দুর রশীদ জানান, আদালতে মামলা চলমান থাকায় এনিয়ে আমাদের তেমন কোন করনীয় নেই। তবে ভুক্তভোগী নারী ও মাসুম আহম্মেদের সাথে কথা বলেছিলাম, একটি সুষ্ঠ সমাধানের জন্য। কিন্তু সোনিয়া খাতুন তাতে রাজি হননি।
হানিফ মেহমুদ/এমএ