শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
spot_img

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতায় বালুর নিচে চাপা শত বিঘা ফসলী জমি

জেলা প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ভারত থেকে আসা মহানন্দা নদীর পাড়ে চাষাবাদ হয় ধান, গম, ভুট্টা, লাউসহ বিভিন্ন সবজি। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার রানিবাড়ি চাঁদপুর চড়কতলা এলাকায় গত দুই বছর ধরে অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে প্রায় ১০০ বিঘা ফসলী জমি। চাষাবাদের মাটির উপর এখন পড়ে আছে বালুর স্তুপ। মহানন্দা নদী ড্রেজিংয়ের পর সেই বালু ফসলী জমিতে ফেলায় চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এসব জমি। 

দুই বছর আগে নদী ড্রেজিংয়ের বালু ফেলা হয় নদীর তীরে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতায় এসব বালু গত দুই বছর ধরে পড়ে আছে ফসলী জমি উপরে। এতে চাষাবাদ করতে পারছেন না চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নদী তীরবর্তী প্রায় ১০০ বিঘা জমির ২৫-৩০ জন কৃষক। ফসলী জমি থেকে বালু অপসারণ করে চাষাবাদের উপযোগী করার দাবি কৃষকদের। 

কৃষকদের দাবি, চাষাবাদের উপযোগী এসব জমিতে বালু ফেলায় ধান চাষাবাদ তো দূরের কথা অন্য কোন ফসল বা সবজিও চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন জমি ইজারা নেয়া কৃষকরা। এনিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার বলেও মেলেনি কোন সমাধান। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে বালু ইজারা দেয়ার মাধ্যমে অপসারণ করে জমি চাষাবাদের উপযোগী করে তোলার। 

কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, এখানে ধান, গমসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হয়। কিন্তু গত দুই বছর ধরে অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। বারবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেও ফসলী জমি থেকে বালু অপসারণের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে ২-১০ ফিট করে বালু বালু পড়ে আছে। 

গত ২০ বছর ধরে নদীর ধারে ধান, মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ করে কৃষক হানিফ আলী বলেন, সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলছেন, যাতে এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা বা পতিত পড়ে না থাকে। কিন্তু এখানে ১০০ বিঘা ফসলী জমি অনাবাদি পড়ে থাকলেও চাষাবাদের উপযোগী করতে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়না। অথচ এসব জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ না করলেও নিয়মিত ইজারা দিতে হচ্ছে জমির মালিককে। 

পঞ্চাশোর্ধ কৃষক ইসাহাক আলী জানান, আমরা নদী খননের বিরুদ্ধে নয়। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এমন ভালো একটা উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে নদীর দুই পাড়ের কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গত ২ বছর ধরে নদীপাড়ের একশ বিঘা জমি বালু নিচে পড়ে অনাবাদি পড়ে আছে, তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নাই। আমাদের দাবি, দ্রুত বালু অপসারণ করে চাষের উপযোগী করে গড়ে তোলা হোক। 

চককীর্তি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আনু মিয়া জানান, গত দুই বছর ধরেই দুর্ভোগে আছেন নদীপাড়ের কৃষকরা। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। কৃষকদের বালু উত্তোলন করে চাষাবাদের উপযোগী করতে পারলে সেখানে অনেক ফসল উৎপাদন করতে পারবেন কৃষকরা। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, নদী ড্রেজিংয়ের সময় সরকারি জায়গা ও ব্যক্তিগত অনেক জায়গায় বালু ফেলতে হয়েছে। এনিয়ে বালুগুলো পরবর্তীতে ইজারা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু জায়গায় ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় নদী খননের দুই বছর পরেও ফসলী জমিতে বালু রয়েছে। 

প্রসঙ্গত, নাব্যতা ফেরাতে গত দুই বছর আগে মহানন্দা নদীর প্রায় ৩৬ কিলোমিটার এলাকায় নদী ড্রেজিং করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ব্যয় হয় ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। 

হানিফ মেহমুদ/এসএ

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর