শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪
spot_img

পান দোকানদারের মৃত্যু, যেন সিনেমা কেউ হার মানায়

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: দোকান থেকে স্ত্রীর চোখের সামনে নামধারী কয়েজন লোক সন্ত্রাসী কায়দায় পান-দোকানদার কে তুলে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পর ছটফট করতে করতে হাসপাতালের গেটের সামনে পান দোকানদারের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর এ মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য ও চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকা জুড়ে। এই ঘটনা যেন সিনেমা কেউ হার মানায়।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে  ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া থানাধীন রাজাগাঁও ইউনিয়নের বাদিয়া মার্কেট নামক এলাকায় ঘটানাটি ঘটে। ১৪ জুন ( শুক্রবার) ময়না তদন্ত শেষে বিকালে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

নিহত পান দোকানদার আলমগীর হোসেন (৩২) ওই এলাকার মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে। সে স্থানীয় বাজারের হোটেলের সামনে পানের দোকান করতেন। দুই সন্তানের জনক ছিলেন তিনি।

নিহতের পরিবার ও স্বজনদের দাবি জমি সংক্রান্ত বিষয়ে  ওই পান দোকানদারকে তুলে নিয়ে গিয়ে তিন ঘন্টা ধরে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করার পর গ্যাস ট্যাবলেট খাইয়ে দেয়া হয়েছে। আর সেই গ্যাস টেবলেট খেয়েই মৃত্যু পান দোকানদার আলমগীরের।

নিহতের স্ত্রী  রেজিনা বেগম সংবাদকর্মীদের বলেন, আমার স্বামী ঘটনার দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পানের ঘুন্টি(দোকান) খুলেছে। আমি ১১ টার দিকে দোকানে গিয়ে দেখি আমার চোখের সামনে শরিফুল ইসলাম ওরফে দরবেশ, নূর ইসলাম ইসলাম  এবং সাদেকুল ইসলাম ওরফে লোধা আসার স্বামীকে জোর করে ধরে নিয়ে গেলেন। পরে তিন ঘন্টা পর আমার স্বামীর খোঁজ করতে  তাদের সঙ্গে দেখা করি এবং স্বামীকে ফেরৎ চাই। 

ওরা আমাকে হুমকি ও তেড়ে আসে মারার জন্য। আমি দৌড়ে আমার মামা শ্বশুরের দোকানে এসে এক গ্লাস পানি খাই। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই আমার স্বামী ঢুলতে ঢুলতে আসছে। আমি আবার দৌড় দিয়ে তার কাছে গেলে সে বলে আমাকে ধরো আমার বুকটা জ্বলে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে, আমাকে বাসায় নিয়ে চলো। ওরা আমাকে যে কি খাইয়ে দিয়েছে আমার বুকটা জ্বলছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার অবস্থার অবনতি হয় এবং রংপুরে রেফার্ড করে। যেতে পথে গেইটে  আমার স্বামী মারা যায়। আমি স্বামী মৃত্যুর বিচার চাই! 

অন্য দিকে স্থানীয়রা যা বলছেন, নিহত আলমগীর খুব ভালো ছেলে ছিলেন। বাবাকে অল্প বয়সে হারিয়ে নিজের সাথে লড়াই সংগ্রাম করে নিজের সংসার গুছিয়েছেন। নিয়মিত বাজারের একটি হোটেলের সামনে পান দোকান মনোযোগ দিয়ে করতেন। ঘটনার দিন তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে  ছাড়ার পর সে অসুস্থ্য হয় এবং ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে৷ 

এটি একটি রহস্যজনক মৃত্যু। এটিকে আত্মহত্যা বলে চালানো হলেও আমাদের চোখে বিষয়টি একিবারই এমন নয়। হয় তাকে নির্যাতন করে বিষাক্ত কিছু খাইয়েছে অপহরণকারীরা। নয়তো তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা এর সঠিক তদন্ত চাই। অভিযুক্তরা কেউ এলাকায় নেই। সবাই আত্মগোপনে চলেগেছে। তাদের গ্রেপ্তার করলেই ঘটনার রহস্য বেরিয়ে আসবে।

নিহতের স্ত্রীর বড় ভাই যা বলছেন, অভিযুক্তদের বাঁচাতে এ মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে গ্রামের একটি প্রভাবশালী মহল। কিন্তু এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। অন্যায় ভাবে তাকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে গিয়ে গ্রামের জমি কেনাবেচার একটি চক্র এ কাজটি করেছে। আমরা পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা নিশ্চয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন।

স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন কিনা প্রশ্নের জবাবে  তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান একটি পক্ষ নিয়ে কাজ করছে(অভিযুক্তদের পক্ষ)। আমার মনে হচ্ছে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত হতে পারে।

এ বিষয়ে  রাজাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেননা বলে জানান এবং নামাজের কথা বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যান। 
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, এই ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিয়ে যেতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাদের উপর প্রভাবখাটাতে পারে প্রভাবশালী মহলটি। থানায় অভিযোগ ও নিহতের বড় ভাইয়ের স্বাক্ষর করা নিয়ে কিছু বিক্ষুব্ধ তথ্য শোনা যাচ্ছিলো। 

এ বিষয়ে নিহতের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সঠিক বিচারের জন্য আমরা থানায় গিয়েছিলাম। ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি বলেছি পুলিশকে। পুলিশ আমার কাছে চারটা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে। আমি পড়াশোনা জানিনা। তবে আমি আমার স্বাক্ষর চিনতে পারবো। 

এ দিকে নিহতের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত পুলিশের দেয়া অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ প্রসঙ্গে একটি কাগজ এই প্রতিবেদকের হাতে আসে। সে কাগজে জাহাঙ্গীর তার স্বাক্ষর চিনতে পারে। কিন্তু কাগজে কি লিখা আছে তা পড়তে পারেনা। 

এ বিয়ষে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের বাড়িতে বা মুঠো ফোনে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছে তারা বর্তমানে পলাতক।

এ বিষয়ে রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্তকর্মকর্তা (ওসি) গুলফামুল ইসলাম মন্ডল বলেন,  নিহতের ময়না তদন্ত রিপোর্ট ও স্থানীয় তদন্তে উপাদান পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এজন্যই লাশের ময়না তদন্ত করানো হয়েছে। স্বাক্ষরের বিষয়ে ওসি বলেন, দুই কপি দরখাস্তে স্বাক্ষর লাগে, লাশ হস্তান্তরে স্বাক্ষর লাগে,  সনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর লাগে ইত্যাদি।

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তাডা:  রাকিবুল আলম চয়ন বলেন, বিষক্রিয়ার অভিযোগে  আলমগীর হোসেনকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রয়োজনী চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। আজকে সেই রোগীর ময়না তদন্তে আসলে আমরা বুঝতে পারি তিনি মারা গেছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ/এস আই আর

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর