জুয়েল আজ্জম: জুলাই মাসের প্রথম দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনের যতই দিন গড়াচ্ছিল আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পুরো বাংলাদেশে। স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রী আন্দোলনে যোগ হতে থাকে। ক্ষমতাসীন সরকার বাহিনীও আন্দোলন দমাতে বেপরোয়া হয়ে পড়েন।
আন্দোলন দমানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, বিজিবি মোতায়েন করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতর্কিত গুলি করতে থাকেন আন্দোলনকারীদের উপর। এছাড়া আন্দোলোন দমাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ছাত্রলীগ এবং আওয়ামীলীগের অন্যন্যা অঙ্গসংগঠনগুলো। ফলশ্রুতিতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে বাড়তে থাকে আহত এবং শহীদের সংখ্যা।
আগস্ট মাসের ৫ তারিখে স্বৈরাচার হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পলায়ন করে। কিন্তু ৪ আগস্ট ছিল আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার মরণ কামড় দেওয়ার দিন। আওয়ামীলীগ এবং তার অন্যন্যা অঙ্গ সংগঠনগুলো ওইদিন মাঠ পর্যায়ে ছিল সক্রিয়। তাঁরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দমাতে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র এবং চাইনিজ অস্ত্র নিয়ে মাঠ পর্যায়ে থাকে। ওইদিন ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন চলতে থাকে।
কুড়িগ্রাম ডিগ্রি কলেজের ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আশিক। তিনি সেদিন আন্দোলন করছিলেন কুড়িগ্রাম জিয়াবাজার এলাকায়। আন্দোলন করার সময় তিনি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন।
দীর্ঘদিন ঢাকার পিজি হসপিটালে চিকিৎসা নেন। কিন্তু আজ দুপুরে ঢাকার পিজি হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাদাৎ বরণ করেন৷ শহীদের মিছিলে যোগ হয় কুড়িগ্রামের সন্তান আশিকের নাম।
আজ রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয় শহীদ আশিকের জানাজা। এই সময় শহীদ আশিকের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
এই সময় তিনি বলেন, হাজার হাজার ভাইরা আহত হয়ে হসপিটালে কাতরাচ্ছে। অনেকে স্হায়ীভাবে হারিয়েছেন অঙ্গ এবং অসংখ্যা শহীদ ভাইয়ের কারণে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।
একইসাথে শহীদেরা আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন এই বাংলাদেশকে গড়ে তোলার।
এই সময় তিনি আরও বলেন, যারা আমার ভাইদের আহত করেছে,শহীদ করেছে সে সকল আওয়ামীলীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগকে রাজনৈতিক পূর্নবাসন এই বাংলায় হতে দেওয়া হবে না।
এইছাড়া যারা আহত এবং শহীদ হয়েছেন সে সকল ভুক্তভোগী পরিবারের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারিভাবে ফাউন্ডেশন গঠন করা হচ্ছে। সকল শহীদ পরিবারের দায়িত্ব নিবে অন্তবর্তীকালীন সরকার।
জানাজা শেষে, সকল শহীদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করা হয় এবং শহীদ আশিককে কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ওনার নিজ এলাকা কুড়িগ্রামে।