জুয়েল আজ্জম: আজ সারাদেশ ব্যাপী পালিত হয় শহিদী মার্চ। ঢাকায় শহিদী মার্চ শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে। বিকাল তিনটায় শুরু হয় শহিদী মার্চ। তিনটায় শহিদী মার্চ শুরু হলেও ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া শহীদের বিভিন্ন প্লে কার্ড হাতে জমায়েত হতে থাকে শহীদদের আত্মাীয়রা।
দেখা যায় বাবা তার শহীদ সন্তানের গুলিবিদ্ধ মৃত লাশের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন৷ তেমনি আমরা কথা বলেছি বরিশাল একতা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র শহীদ মারুফ হোসাইনের বাবার সাথে।
শহীদ মারুফ হোসাইনের বাবা বলেন, গত ১৯ জুলাই ঢাকা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে তার বড় সন্তান মারুফ হোসাইন পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
তিনি বলেন, আমার সন্তান এই দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। বাবা হিসেবে আমি গর্বিত। তবে দুঃখের বিষয় হলো, যারা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছে দুই একজনকে ছাড়া অন্য শহীদের তেমন স্মরণ করা হচ্ছে না। কোন খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে না।
তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, এই আন্দোলনে দুইজন সমন্বয়ক উপদেষ্টা পরিষদে আছেন। ওনাদের উচিত এই আন্দোলনে যে সকল শহীদ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত আছে সে সকল পরিবারের খোঁজ খবর নেওয়া। সে সকল পরিবারের পাশে দাঁড়ানো।
অনেক শহীদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। সে সকল শহীদের ভিড়ে আছে কারো আদরের এক মাত্র ছোটভাই।
তেমনি শহিদী মার্চে আমরা কথা বললাম, শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বির আপন দুইবোনের সাথে। যারা প্লেকার্ড হাতে আজকের শহিদী মার্চে স্মরণ করতে আসছেন আদরের ছোটভাইকে।
শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বির বড় বোন বলেন, আগস্টের ৪ তারিখে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় আমার আদরের ছোটভাই৷ যেদিন আমার ভাই শহীদ আমরা কেউ জানতাম না৷ মহল্লায় সবাই বলাবলি করছিল মহল্লার একটা ছেলে গুলি খাইছে। সে মারা গেছে। আমরা তখনো জানতাম না যে সে ছেলেটা আমার ভাই। পরে রাতে আমরা আমার ভাইকে কল দিয়েও মোবাইলে পাচ্ছিলাম না৷ আমাদের ভেতরে ভয় ডুকে যায়। পরেরদিন অনেক খোঁজাখুঁজির পর আমরা হাসপাতালে দেখতে পায় আমার ভাই স্ট্রেচারে শুয়ে আছে। তার কপালে ফুটো। কপালে গুলি লাগছে৷ আমার ভাই আর বাঁইচা নাই। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বির আপন বড়বোন।
তিনি বলেন, আমার ভাই এই দেশের জন্য জীবন দিছে। সে শহীদ। রাষ্ট্রীয়ভাবে যেন আমার ভাইয়ের এই শহিদী মর্যাদা থাকে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র থেকে কোন খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না কেন্দ্র থেকে কেউ তেমন কোন খোঁজ খবর নেয়নি৷ আমাদের পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল। সবার আশা ছিল ভাই ইন্জিনিয়ার হবে৷ তাকে পলিটেকনিকে পড়াচ্ছি। সে সংসারের হাল ধরবে। অথচ স্বৈরাচার হাসিনা আমার ভাইকে মাইরা ফালাইছে।
তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, যদি বর্তমান তত্ত্ববধায়ক সরকার আমাদের পাশে দাঁড়ান৷ আমাদের খোঁজ খবর নেন। তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত এই সকল শহীদ পরিবার অন্তত টিকে থাকবে। তিনি জোর দাবি জানিয়ে আরো বলেন, যে আওয়ামী সরকারের গুন্ডারা আমার ভাইকে শহীদ করেছে তাদের এই বাংলাদেশে পুনরুত্থান হওয়ার সুযোগ নাই। আর এই স্বৈরাচার হাসিনার ফাঁসি দিতে হবে। তাহলেই আমার ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে।
উল্লেখ্য শহিদী মার্চে অসংখ্যা মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। তাঁরা সবাই স্মরণ করছিলেন সকল শহীদের। পরবর্তীতে বিশাল মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে নিউ মার্কেট, সাইন্সল্যাব, কলাবাগান, বিজয় স্মরণী হয়ে শাহবাগের মধ্যে দিয়ে মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।