নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি যোগদান করেছে নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। রোববার ক্যাম্পাসে উপাচার্য আগমনের প্রথম দিনে ফুল নয়, বরং বৈষম্যমুক্ত ক্যাম্পাস গঠনের লক্ষ্যে ৩৩ দফা দাবি নিয়ে গেছেন শিক্ষার্থীরা। এরমধ্যে ১৭ নম্বর দাবিতে উল্লেখ ছিলো, মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গঠন করতে হবে। প্রয়োজনে ডোপটেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে।
রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, “৩৩ দফা দাবি নিয়ে নবনিযুক্ত উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফুল নয়, বরং দাবি নিয়ে গিয়েছেন। উপাচার্য সঠিক ও সৎ দায়িত্ব পালন করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় বেলায় তাঁকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হবে।”
শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মাঝে দলীয় রাজনীতি ও সিন্ডিকেট প্রথা বন্ধের দাবি জানান। তারা চান বিশ্ববিদ্যালয়ে সকলেই দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখুক। যেসব ব্যক্তিরা এই নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি তোলা হয়েছে।
এছাড়াও প্রস্তাব করা হয়, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের যেমন প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, হল প্রভোস্ট, পরিবহন প্রশাসক, ক্যাফেটেরিয়া পরিচালকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে দায়িত্ব প্রদান করা উচিত। এতে শিক্ষার্থী-প্রশাসন যৌথ মনিটরিং টিম গঠন করে ক্যাম্পাসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা ছাত্রদের প্রতি প্রশাসনিক সমর্থন দাবি করেন এবং যারা এই আন্দোলনে বাঁধা দিচ্ছে তাদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেন তারা। একইসাথে, শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাস নেওয়া এবং অফিসার-কর্মচারীদের নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সেমিস্টারে শিক্ষকদের মূল্যায়নের ফর্ম শিক্ষার্থীদের কাছে প্রদান করা উচিত। এই মূল্যায়ন ভিত্তিতে শিক্ষকদের প্রমোশন নির্ধারণ করা হবে এবং ভিসি সরাসরি এটি নিয়ন্ত্রণ করবেন। শিক্ষার্থীরা আরও চান যে হলের সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে মেধা, আর্থিক অবস্থা এবং শিক্ষার্থীদের স্থায়ী ঠিকানার দূরত্ব বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বরাদ্দ প্রদান করা হোক। পাশাপাশি হলের সিট ভাড়া ৫০ টাকায় নামিয়ে আনারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পাসের বাস রুট এবং শিডিউল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে পুনঃনির্ধারণের আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা দাবি করেছে মেডিকেল সেন্টারে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্যাফেটেরিয়া ও হলের খাবারের দাম কমাতে হবে। ক্যাম্পাসে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা এবং রিডিং রুমে পর্যাপ্ত নিউজ পেপার ও পড়ার টেবিল স্থাপনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে
শিক্ষার্থীদের আরেক দাবিতে বলা হয়, মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গঠনের জন্য প্রশাসনকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে ডোপটেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেছেন, প্রশাসনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিয়মিত সম্পদের হিসাব প্রকাশ করতে হবে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহিদ হওয়া শিক্ষার্থীদের স্মরণে ক্যাম্পাসে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাবও রয়েছে। এছাড়াও, নজরুল ভাস্কর্য ও ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসহ চলমান নির্মাণকাজগুলো সময়মত সম্পন্ন করার দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
উন্মুক্ত গণআলোচনার মাধ্যমে এই দাবিগুলো নির্ধারণ করা হয় এবং ভবিষ্যতেও প্রয়োজনীয় যৌক্তিক দাবি সংযোজন ও বিয়োজন করা হবে বলে জানান শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান।
মো. সাইফুল ইসলাম/এস আই আর