শুক্রবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৪
spot_img

এক দশকে কুবির রোভার স্কাউটস গ্রুপ

কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) রোভার স্কাউট গ্রুপের বার্ষিক তাঁবুবাস, দীক্ষা ক্যাম্প  সমাপ্ত হয়েছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার মাধ্যমে তিন দিন ব্যাপী এই আয়োজনের সমাপ্ত হয়। 

গার্ল-ইন রোভারমেট শারমিন মেঘলা ও গার্ল-ইন রোভার রুবাইয়াত তাজবিনের সঞ্চালনায় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউটসের গ্রুপ সম্পাদক ও ইউনিট লিডার লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: জিয়া উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম, বিশ্ববিদ্যালয় গার্ল-ইন রোভার স্কাউটস গ্রুপের গার্ল-ইন ইউনিট লিডার লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস, প্রধান স্কাউটস ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটস কুমিল্লা জেলা রোভারের সহ সভাপতি  মাসুক আলতাফ চৌধুরী। 

এর আগে সকালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউটের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রা ও কেক কাটা হয়। এছাড়া তাঁবুবাস ও দীক্ষা ক্যাম্পে হাইকিং সহ রোভার সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুশীলন ও রোভার স্কাউটের সিলেবাস ভিত্তিক নানান কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়।

আলোচনা অনুষ্ঠানে  বাংলাদেশ স্কাউটস কুমিল্লা জেলা রোভারের সহ সভাপতি মাসুদ আলতাফ চৌধুরী রোভার স্কাউটের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। এবং নতুন রোভারদের প্রতি বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করে বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বক্তৃতার শুরুতে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে  শহিদদের স্মরণ করেন। বিশেষভাবে উল্লেখ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শহিদ শিক্ষার্থী আবদুল কাইয়ুমের কথা। এছাড়া তিনি বলেন, ‘আমাদের ভর্তি পরিক্ষায় রোভার স্কাউট যেভাবে সাহায্য, সহযোগিতা করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রোভার স্কাউটকে আমরা আশ্বাস দিচ্ছি তোমাদের যা যা প্রয়োজন তা ভিসি স্যার, ট্রেজারারের সাথে কথা বলে দেওয়ার চেষ্টা করব।’ বক্তব্যের শেষে তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হওয়ার জন্য ও মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকার আহ্বান করেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, “আমরা দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে, বিভিন্ন সময়ে আপনাদের যোগ্য নেতৃত্ব অনুধাবন করেছি। বিশেষ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট বিভিন্ন দিবস উদযাপনের সময়, ভর্তি পরিক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যক্রমে তাদের উপস্থিতি  দেখার মতো। আজকের বিভিন্ন আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম, মহান আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখে, দেশপ্রেমের প্রতি উজ্জীবিত হয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য জ্ঞান অর্জন করা, দক্ষতা অর্জন করা এবং প্রজ্ঞার মাধ্যমে নিজেদের গঠন করার এক আদর্শ প্লাটফর্ম এই রোভার স্কাউট। এইখানে জাতীয় প্রয়োজনে নিজেকে নিয়োজিত করার এক দীপ্ত শপথও গ্রহণ করেন আপনারা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্ল-ইন রোভার স্কাউটস গ্রুপের গার্ল-ইন ইউনিট লিডার লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আজকের ১০ বছর পূর্তি ও দীক্ষা লাভ অনুষ্ঠান অনেক বেশি জাকজমকপূর্ন মনে হচ্ছে এবং সেটার প্রতি যারা শ্রম দিয়েছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। সাবেক রোভার যারা আছেন তারা অ্যালামনাইয়ের জন্য বলেছেন। এটা এখন সময়ের দাবি। ১২ বছর পূর্তির আগেই আমরা গঠন করে ফেলব বলে আশাবাদী। এছাড়া তিনি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে সুদৃষ্টি কামনা করেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউটসের গ্রুপ সম্পাদক ও ইউনিট লিডার লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট হাটি হাটি পা করে আজ ১০ বছরে পা রেখেছে। এই রোভার স্কাউটের শুরু থেকে আঠারো ব্যাচের যাদের আমরা রোভার স্কাউট হিসেবে অন্তর্ভুক্তি করেছি তারাই এই সংগঠনকে বাচিয়ে রেখেছেন। তারাই এই সংগঠনের অক্সিজেন। এই রোভার স্কাউট করে আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রোভার স্কাউট শেখায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে।’

তিনি আরো বলেন, ‘রোভার স্কাউটসকে একটি সহশিক্ষা কার্যক্রম বলে এটাকে ছোট করে ফেলা হয়। এটি একটি আন্দোলন। সেই আন্দোলন হচ্ছে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন, আমার যে প্রতিষ্ঠান আছে সেই প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের আন্দোলন, দেশ পরিবর্তনের আন্দোলন। সেই পরিবর্তন হবে গঠনমূলক পরিবর্তন। যে পরিবর্তনের ফলে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।’

বক্তব্য প্রদান শেষে বর্ষসেরা রোভার ও গার্ল ইন রোভার ঘোষণা করা হয়।  বর্ষসেরা রোভার নির্বাচিত হয়েছেন নূরে আলম ও বর্ষসেরা গার্ল ইন রোভার নির্বাচিত হয়েছেন রুম্মানা হোসেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা স্মারক গ্রহণ বাবুল মিয়া ও শারমিন মেঘলা। এরপর সংগঠনের পক্ষ থেকে বিদায়ী রোভারদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। ক্রেস্ট প্রদান শেষে  সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, রোভার স্কাউট স্কাউট আন্দোলনের শাখা। এ শাখা খোলা হয় ১৯১৮ সালে ১৭-২৫ বছর বয়সী যুবকদের নিয়ে। ইংল্যান্ডের লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল (বিপি) ১৯০৭ সালে ১১-১৭ বছর বয়সী ২১ জন বালক নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্রাউনসী দ্বীপে ক্যাম্প অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্কাউট আন্দোলনের সূচনা করেন। স্কাউটিংয়ের মূলমন্ত্র এবং প্রশিক্ষণের নীতিমালা তুলে ধরে ব্যাডেন পাওয়েল ১৯০৮ সালে স্কাউটিং ফর বয়েজ নামে বই প্রকাশ করেন। বইটি তাৎক্ষণিকভাবে বালকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে, ১৯০৯ সালের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কাউটিং ছড়িয়ে পড়ে। মেয়েরাও এগিয়ে এলে ব্যাডেন পাওয়েল ১৯১০ সালে শুরু করেন গার্লস গাইড।

আবু হানিফ/এমএ

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর