বুধবার, মে ১৪, ২০২৫
spot_img

দিনব্যাপী আয়োজনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

জাবি প্রতিনিধি: দিনব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে।

আজ রবিবার (১২ই জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান ব্যবসায় অনুষদ সংলগ্ন এলাকায় শান্তির প্রতীক পায়রা ও আকাশে বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটির শুভ উদ্বোধন করেন।

এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স আমাদের দেশের বয়সের ‘সমান’। দেশের প্রতি আবেগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আবেগ দুটি মিলে একাকার হয়ে যায়। গত ৫৪ বছরে যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে এতদূর এগিয়ে এনেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সকলের সহযোগিতায় আগামীতে আমাদের সাধ্যানুযায়ী একাডেমিক উন্নয়ন ও প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।”

উক্ত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রব, রেজিস্ট্রার ড. এ.বি.এম. আজিজুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. রাশিদুল আলম, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও শিক্ষকবৃন্দ এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ, হল ও অন্যান্য অফিস থেকে স্বতন্ত্র ব্যানারে আন্দোলন মিছিল নিয়ে উপস্থিত হয়। এরপর আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রাটি ব্যবসায় অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে চৌরঙ্গী ঘুরে শহিদ মিনার দিয়ে মুক্তমঞ্চে এসে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। এছাড়াও দিনভর রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ, প্রীতি ফুটবল ও হ্যান্ডবল ম্যাচ আয়োজন, পুতুল নাচ ও রাগিনী সংগীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবারকে সম্মাননা স্মারক প্রদান, আল্পনা ও গ্রাফিতি অঙ্কন, পিঠা মেলা ও কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান এই চারটি বিভাগসহ ২৩ জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ১৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদের অধীনে ৩৪ বিভাগ ও ৪টি ইন্সটিটিউটে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭২৪ জন শিক্ষক, ৩৬৬ জন কর্মকর্তা, ৯৪০ জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী এবং ৫৪৮ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য শতাধিক শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের স্কুল এন্ড কলেজে রয়েছেন ৫৪ জন শিক্ষক। বর্তমানে ১৪ হাজার ৩৭৯ জন শিক্ষার্থী (৪৭-৫৩ ব্যাচ) বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ছাত্রদের ১১টি এবং ছাত্রীদের ১০টিসহ মোট ২১টি আবাসিক হল রয়েছে। ১৯৯৭ সালে প্রথম সমাবর্তন এবং ২০২৩ সালে সর্বশেষ ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষা ও গবেষণায় অবদান রেখে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্বসেরা ২ শতাংশ গবেষকের তালিকায় একাধিকবার বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাম এসেছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ (টিএইচই) – এর ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিং-২০২৪ এ এককভাবে প্রথম এবং ২০২৫ এ যৌথভাবে দেশসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও অতুলনীয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শীত মৌসুমে এখানকার স্বচ্ছ পানির লেকে আসে হরেক রকমের পরিযায়ী পাখি। লেকগুলোতে ফুটে থাকা লাল শাপলার বুকে এসব পাখির জলকেলি মুগ্ধ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের। বিশাল জলাশয়যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এছাড়াও এখানে বছরব্যাপী নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখরিত থাকায় ‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’ হিসেবে উপাধি পেয়েছে‌।

প্রতিবছর পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনুষ্ঠিত হয় পাখিমেলা। এ ছাড়া এখানে প্রজাপতির সংরক্ষণ ও প্রজনন বৃদ্ধির জন্য রয়েছে ‘প্রজাপতি পার্ক’। প্রজাপতি সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় ‘প্রজাপতি মেলা’। বিজ্ঞান গবেষণার জন্য রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ ‘ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র’।

দীর্ঘপথ পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়টি পেয়েছে অসংখ্য গুণী মানুষের সংস্পর্শ। তাদের মধ্যে প্রখ্যাত কবি সৈয়দ আলী আহসান, অধ্যাপক সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়, লেখক হায়াৎ মামুদ, লেখক হুমায়ুন আজাদ, নাট্যকার সেলিম আল দীন, কবি মোহাম্মদ রফিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান, অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আনু মুহাম্মদ, অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি, শহীদুজ্জামান সেলিম, জাকিয়া বারী মম, সজল নূর, ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম প্রমুখ অন্যতম।

মোঃ আরিফ হোসেন/এমএ

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর