মেহেদী হাসান মিরাজ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে ভোক্তার।
মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা শহরে স্যামসাং শো রুমের তৃতীয় তলার বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি নামের কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের সংগঠনের আরও কয়েকজন পালিয়ে যায়।
আটককৃতরা হলেন, বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি মফিজুল ইসলাম, সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম। তিনজনের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা পালন করতেন আমিনুল ইসলাম।
এদের মধ্যে মফিজুলের বাড়ি জেলার বোদা উপজেলার আমতলা কাজীপাড়া এলাকায়, আমিনুলের বাড়ি পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের ঝাকুয়াকালি এলাকায় এবং সাদেকুল ইসলামের বাড়ি জেলা শহরের মসজিদপাড়া এলাকায়। তিনজনের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা পালন করতেন আমিনুল ইসলাম
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এ চক্রটি পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি ও সম্পাদকসহ কমিটির ১০ সদস্য বিভিন্ন স্থানে নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও জরিমানা আদায় করে আসছিলেন। গ্রামের সহজ সরল মানুষের
দোকানে অভিযান চালিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছিলেন টাকা।
গত সোমবার (০১ এপ্রিল) পঞ্চগড় সদরের সাতমেরা ইউনিয়নের গোয়ালঝাড় গ্রামে তাদের জরিমানা করা একটি রসিদ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়ে। একই রশিদে দেখা যায় পঞ্চগড় জেলা শহরের স্যামসাং শো রুম ভবনের তৃতীয় তলায় করেছেন তাদের অফিস। জানা গেছে, সেখান থেকেই চলতো তাদের কার্যক্রম। পরে মঙ্গলবার দুপুরে একই কায়দায় মাইক্রোবাস নিয়ে তারা অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাদের তিনজনকে আটক করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী। পরে বিকেলে তাদের পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়।
পঞ্চগড় সদরের সাতমেরা ইউনিয়নের গোয়ালঝাড় বাজারের ভুক্তভোগী দোকানদার তরিকুল ইসলাম বলেন, তারা পাঁচজন একটি মাইক্রোবাসে করে আমাদের বাজারে আসে। এ সময় নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে আমাদের জানায় তাদের দুইলাখ টাকা জরিমানা করার ক্ষমতা রয়েছে। সেখান থেকে তারা প্রথমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে চায়। পরে দুই হাজার টাকা জরিমানা করে টাকা দিয়ে দ্রুত চলে যায়। পরে আমাদের সন্দেহ হলে আমরা বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হই এরা প্রতারক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। যাতে আর কেউ গরিব মানুষের সঙ্গে এমন অন্যায় করার সাহস না পায়।
পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি ও আটক মফিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের নতুন কমিটি হয়েছে। গত দুইদিন আগে অফিস ভাড়া করেছি। আমরা প্র্যাকটিস করছিলাম। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য তাদেরকে ছোট ছোট জরিমানা করেছি। আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের বলেছেন যে আমরা ছোট খাটো জরিমানা করতে পারবো। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী বলেন, এই চক্রটি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করছিল। শুধু পঞ্চগড় নয় অন্য জেলাতেও এমনটি করেছে। তাদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কোনো সম্পর্ক নেই। কখনোই ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হয় না। তাদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরাই মামলা করছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় থানার মামলার প্রক্রিয়া চলছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে। এছাড়া এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এসএ