আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি: “সবাই মিলে গড়বো দেশ, আমার সোনার বাংলাদেশ” এমন অসংখ্য শ্লোগানকে সামনে রেখে বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকার সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ল্যাম্পপোস্টসহ শহরের অলিগলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে লাগানো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাজনৈতিক পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, নির্বাচনী পোস্টার ও ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা বার্তা, সামাজিক সংগঠনের পোস্টার সহ বিভিন্ন ধরণের অবাঞ্ছিত ও অপরিচ্ছন্ন ভাবে লাগানো পোস্টারগুলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে শহরের রাস্তা গুলো অপরিষ্কার হয়ে যায়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আদমদীঘি উপজেলা শাখার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব রুমানা আফরোজের সাথে দেখা করে তাঁর অনুমতি সাপেক্ষে শহরের উল্লেখিত স্থান গুলো পরিষ্কার করে সেখানে অপেশাদারি কচিকাঁচা হাতের রংতুলির আঁচড়ে আঁকা হচ্ছে শহীদদের নানা ধরণের দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি চিত্র।
আদমদীঘি উপজেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বেশ কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী অতি উৎসাহ নিয়ে বিভিন্ন এলাকার অপরিচ্ছন্ন দেওয়াল গুলো পরিষ্কার করে সেখানে তারা রংতুলির আঁচড় দিয়ে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করছে নীতি কথা সমৃদ্ধ বাণী। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে তারা লিখে যাচ্ছে অনেক কিছু, ব্যাক্ত করে যাচ্ছে শহীদদের প্রতি তাদের অবুঝ মনের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। শিক্ষার্থীরা শহীদ স্মরণে আঁকছে শহীদদের বিভিন্ন প্রকার গ্রাফিতি চিত্র। সেখানে স্থান পাচ্ছে নানা ধরণের নীতিবাক্য। এসবে মধ্যে দিয়ে শহীদসহ দেশ ও জাতির প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমিক স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা তাদের রংতুলির আঁচড়ে বারংবার বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে যাচ্ছে বীর শহীদদের। আর তারই ধারাবাহিকতায় রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র প্রথম শহীদ আবু সাঈদের গ্রাফিতি চিত্র এঁকেছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা মাঝখানে। শহীদ মুগ্ধের চিরচেনা সেই অমর উক্তি “পানি লাগবে পানি” আরো আছে, “বাবা দেখো মুক্ত আকাশে হেলিকপ্টার উড়ে” “কারার ঐ লৌহ কপাট” “স্বাধীনতা এনেছি সংস্কার আনবো” “মৃত্যু ভয়ে আমরা ভীত নই” “স্বাধীনতার নতুন সূর্যদ্বয় ৩৬ শে জুলাই” “স্বাধীন করেছি রক্ষাও করবো” “মোরা একটি মুখের হাসির জন্য লড়াই করি” “তারুণ্যের জয়গান শুনি” “তোরা সব জয়ধ্বনি কর” এমন আরো অসংখ্য বাণী সমৃদ্ধ গ্রাফিতি চিত্র কচিকাঁচা হাতের রংতুলির আঁচড়ে শোভা পাচ্ছে শহরের বিভিন্ন এলাকার দেওয়ালে। চারি দিকে তাকালে মনে হচ্ছে বিভিন্ন রঙে রঙ্গিন হওয়া এ যেনো এক নতুন শহর।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আদমদীঘি উপজেলা শাখার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছে সৈকত, ফয়সাল, ফাহাদ, ফারদিন, তুসমী, তুরনা, সিয়াম, আশা, সৌরভ, স্মৃতি, শিশির, শিফা, রাইসা, ফাহমিদা, জ্যোতি, মীম, রিয়াতুন, সুমনা, ফলু, আদিবা, রিয়া, রিতু, মেহেরিন, হৃদয়, রিয়াদ, অনন্ত, ঈমন, শফিক, আরমান, আবিরসহ আরো অনেকে গ্রাফিতি চিত্র আঁকা কর্মসূচির সাথে যুক্ত আছে। এদের মধ্যে যুঁথী আক্তার বলেন, “দূর্নীতি মুক্ত দেশ চাই” তানভীর বলেন, “বৈষম্য মুক্ত দেশ চাই” রানিম বলেন, “সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা চাই” নাজিন বলেন, “ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার” “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা চাই” নূর মোহাম্মদ বলেন, “সংঘাত নয় শান্তি চাই” আদিবা বলেন, “সকল শহীদের প্রাপ্ত সম্মান চাই” ফুলবানু বলেন, “সকল ক্ষেত্রে অন্যায়ের প্রতিবাদ চাই” মুন বলেন, “সমাজে শান্তি শান্তি প্রতিষ্ঠা চাই” এমন আরো অসংখ্য, অগনিত চাওয়া তরুণদের মনে জমে আছে। সবকিছুর মূলে তাদের চাওয়া দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সমাজের সব জায়গায় শান্তির বীজ বপন করতে হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আদমদীঘি উপজেলা শাখার শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনার পাশাপাশি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সমাজের সকল স্তরের উন্নয়নে আমরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে কোনো রকন কার্পণ্য করবোনা। আমরা ছিলাম, আছি ভবিষ্যতে ও দেশের তরে থাকবো ইনশা-আল্লাহ। মোরা আকাশের মতো বাধাহীন লেখা গ্রাফিতি চিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে তারা উপরোক্ত কথাগুলো বাধাহীন ভাবে সুন্দর করে উপস্থাপন করেছে।
আবু বকর সিদ্দিক বক্কর/এমএ