জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ: কোটা সংস্কার আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস এবং শিক্ষার্থীদের ত্যাগকে স্মরণ করে নওগাঁর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালগুলোতে শিল্পীদের তুলি দিয়ে জীবন্ত করে তোলা হচ্ছে সেই দিনগুলোর স্মৃতি। স্থানীয় শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে নওগাঁ শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুরনো পোস্টার সরিয়ে, দেয়ালগুলো পরিষ্কার করে, নতুন রংয়ের মাধ্যমে গ্রাফিতি আঁকা হচ্ছে। এই কর্মসূচি শুধু একটি স্মরণীয় উদ্যোগ নয়, বরং শহরের পরিবেশ উন্নয়ন এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার একটি মহৎ উদাহরণ।
সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত এই আন্দোলন। আন্দোলনটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে।
নওগাঁর শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করেন, কোটা আন্দোলনের ইতিহাস আমাদের দেশে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। সেই চেতনা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তারা দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকার উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতিটি গ্রাফিতি চিত্রে আন্দোলনের বিভিন্ন দৃশ্য, শিক্ষার্থীদের সাহসী পদক্ষেপ, এবং ঐতিহাসিক স্লোগান তুলে ধরা হয়েছে।
নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জেরিন তাসনিম শিফা বলেন, “আমরা আমাদের পূর্বসূরীদের সংগ্রাম এবং ত্যাগের কথা ভুলতে চাই না। এই গ্রাফিতি গুলো আমাদের সেই আন্দোলনের চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করবে এবং নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেবে।”
সরেজমিনে, নওগাঁ সরকারি কলেজে গিয়ে দেখা যায়- শুধু দেয়াল চিত্র আঁকাই নয়, শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস এলাকার পুরনো এবং মলিন পোস্টার সরিয়ে নতুন করে দেয়াল রং করছেন। এর ফলে দেওয়াল জায়গার চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। পুরনো পোস্টারে ঢেকে থাকা দেয়ালগুলো এখন সজীব এবং রঙিন চিত্রকর্মে পরিণত হয়েছে, যা কলেজের পরিবেশকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে।
এই উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী একই কলেজের শিক্ষার্থী নাশিয়া জাহিন তন্বী বলেন, “আমাদের কাজ শুধু শহরকে সুন্দর করা নয়, আমরা চাই সবাই সচেতন হোক এবং শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব পালন করুক। আমরা নিজেরাই এ দায়িত্ব নিয়েছি, যাতে সবাই আমাদের অনুসরণ করে।”
গ্রাফিতি আঁকানোর কাজে নিয়োজিত উদ্যোক্তা জোবায়ের হোসেন জানান, প্রতিটি চিত্রকর্ম আন্দোলনের ইতিহাসের একটি অধ্যায়কে জীবন্ত করে তোলে। তাদের মতে, এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়গুলো আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবে।
তিনি আরও জানান, “আমরা প্রতিটি গ্রাফিতিতে এমন কিছু বার্তা দিতে চাই, যা দেখলে নতুন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে এবং সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করবে। এই ধরনের চিত্রকর্ম শুধু একটি শিল্পকর্ম নয়, বরং এটি আন্দোলনের চেতনাকে জীবিত রাখার একটি মাধ্যম।”
এদিকে, নওগাঁর সাধারণ মানুষ এই উদ্যোগকে অত্যন্ত সাদরে গ্রহণ করেছেন। অনেকেই মনে করেন, এই ধরনের কর্মসূচি শহরের পরিবেশ উন্নত করার পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরি করবে। এই ধরনের উদ্যোগ আমাদের শহরকে আরও সুন্দর করে তুলছে। শিক্ষার্থীদের এই চেষ্টা শুধু শহরের সৌন্দর্য বর্ধন করছে না, বরং সমাজের উন্নয়নের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মোঃ এ কে নোমান/এস আই আর