মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বনগাও-২ গ্রামে ব্যক্তি মালিকানাধীন রেকর্ড ভুক্ত জমি দখল করে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি মহলের বিরুদ্ধে। জমির মালিকরা রাস্তা নির্মাণে বাঁধা দেয়ায় ওই জমির ওপর থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলে ওই মহলটি। এ ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগি আকুল মিয়া ও অরুণ কালোয়ার।
অভিযোগ সূত্রের বরাতে জানা গেছে, কুলাউড়ার লক্ষীপুর মৌজার বিভিন্ন দাগে জমি রয়েছে সদর ইউনিয়নের বনগাঁও-২ গ্রামের বাসিন্দা আকুল মিয়া ও কর্মধা ইউনিয়নের কালিটি চা-বাগানের নিরঞ্জন কালোয়ার এবং অরুণ কালোয়ার গংয়ের। মাস দেড়েক আগে বনগাঁও-২ এলাকার চিনু মিয়া গংরা আকুল মিয়া, নিরঞ্জন কালোয়ার ও অরুণ কালোয়ারের রেকর্ড ভুক্ত মালিকানাধীন জায়গা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ওই জমির উপর দিয়েই রাস্তা তৈরির চেষ্টা করেন। অথচ চিনু মিয়া গংদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য তাদের বাড়ির পাশ দিয়েই বিকল্প একটি রাস্তা গ্রামীণ মূল সড়কের সাথে সংযোগ রয়েছে। সেই সড়ক দিয়ে তারা দীর্ঘদিন থেকে যাতায়াত করছেন।
গত ২৪শে নভেম্বর আকুল মিয়া এবং নিরঞ্জন কালোয়ার ও অরুণ কালোয়ার এরা সার্ভেয়ার নিয়ে আকুল মিয়ার বাড়ির দক্ষিণ ও উত্তর দিকের সীমানা নির্ধারণ করতে গেলে বনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা চিনু মিয়া, জামাল মিয়া, চিনু মিয়ার স্ত্রী মমতা বেগম, মেয়ে রেহানা পারভীনসহ চিনু মিয়ার ভাতিজা ও তাদের স্ত্রী”গণ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে কাজে বাঁধা প্রদান করে। ওইসময় তারা বলতে থাকে ওই জায়গা দিয়ে রাস্তা করার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আকুল মিয়ার ছেলে ফয়ছল মিয়া বলেন, আমরা দুই পক্ষ মিলে ২ জন সার্ভেয়ারের উপস্থিতিতে আমাদের জায়গার সীমানা নির্ধারণ করছিলাম। হঠাৎ করে চিনু মিয়ার পরিবারের ৫-৬জন মহিলা এসে আমাদের গালিগালাজ শুরু করে। আমরা তখন মান সম্মানের ভয়ে সাবেক চেয়ারম্যান শাহাজাহান সাহেব’কে বিষয়টি জানিয়ে অবহিত করি। তিনি বিষয়টি সরেজমিনে দেখে গেছেন। আমাদের রেকর্ডীয় জমি দখল করে জোরপূর্বক রাস্তা করতে চায় তারা। আমরা বাঁধা দিলে তারা বলে, এই জায়গায় তারা পরিমাপ করতে দিবেনা।
কালিটি চা-বাগানের বাসিন্দা অরুণ কালোয়ার বলেন, আমাদের ভূমিতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও ভূমির মাটি অন্যায়ভাবে কেটে বিনষ্ট করে আসছে চিনু মিয়া গংরা। তারা ওই ভূমি জোরপূর্বক দখল করে রাস্তা নির্মাণ করতে চায়। অথচ তারা চলাচল করার বিকল্প তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তা রয়েছে। গত ১৭ই অক্টোবর তারা আমাদের ভূমি থেকে গাছ কাটা শুরু করলে আমরা তাদের আপত্তি জানাই। তখন তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় গত ২০শে অক্টোবর জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ ও গাছ কাটার ঘটনায় চিনু মিয়া গংয়ের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। তিনি আরো বলেন, চিনু মিয়ার পরিবারের লোকজন আমাদের রেকর্ডীয় ৪২ শতক জমি দখল করে রেখেছে। সেই জমি উদ্ধারে আমি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে রেহানা পারভীন বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা অনেক আগে থেকে ওই জায়গা দিয়ে চলাফেরা করেছেন। এই ধারাবাহিকতায় আমরাও এটা রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু আকুল মিয়া, নিরঞ্জন ও অরুণ কালোয়ার গং ওই জায়গা দিয়ে চলাচল করতে আমাদের বাঁধা দিচ্ছেন। আমাদের না জানিয়ে তারা জায়গা পরিমাপ করতে গেলে আমরা আপত্তি জানাই। তখন প্রতিপক্ষ আমাদের মারধর করে। এ বিষয়ে আমরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) শাহ্ জহুরুল হোসেন বলেন, আমি কাউকে বলিনি অন্যের মালিকানাধীন জমি দিয়ে রাস্তা তৈরি করতে। আমার নাম ব্যবহার করে যদি কেউ অপপ্রচার চালায় তাহলে সেটি খতিয়ে দেখবো। এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিমির বনিক/এমএ