শুক্রবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৪
spot_img

নবীন চোখে গণঅভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত

জাবি প্রতিনিধি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ‘নবীন চোখে গণঅভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা, শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবনা ও বিপ্লবী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা আয়োজিত হয়। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।

উক্ত আয়োজনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ, উপস্থাপক ও আইনজীবী মানজুর আল মতিন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ফয়সাল মাহমুদ শান্ত। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানা লাকি, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ লুৎফুল এলাহী এবং পরিবেশ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন রুনু। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা ও প্রশাসন), প্রক্টর ও শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ ও জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ সিয়াম ১৫ই জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে ছাত্রলীগ কর্তৃক বীভৎস হামলার বর্ণনা করেন।

শহীদ ইয়ামিনের পিতা ২৪ এর শহীদদের ‘বিপ্লবী যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানান। শহীদদের কোনো ভাস্কর্য বা ম্যুরাল নির্মাণের পরিবর্তে তাঁদের নাম-স্মৃতিমূলক ডিজিটাল বোর্ড স্থাপনের দাবি জানান।

শহীদ শ্রাবণ গাজীর পিতা মান্নান তাঁর শহীদ সন্তানের জন্য দোয়া চান, আহতদের যথাযথ চিকিৎসা প্রদান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ শ্রাবণ গাজীর নামে একটি হলের নামকরণ করার আহ্বান জানান।

শহীদ আলিফের বাবা বিতর্কিত উপদেষ্টা নিয়োগে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের পরিবর্তে যোগ্য ও দক্ষ উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি জানান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে জাবি শিক্ষার্থীদের পদায়ন করার আহ্বান জানান।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র সংস্কারে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন এবং গণঅভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ঘটনাবলি নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

সোস্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, ভোটচুরি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, নিপীড়ন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের গোড়াপত্তন শুরু হয়েছিল শেখ মুজিবের হাত ধরে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একটি দুর্গ ছিল, এখানকার শিক্ষকরা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে যে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। উত্তরবঙ্গে বন্যা ও উন্নয়ন বাজেট বৈষম্যের শিকার হচ্ছে‌ এগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দূর করতে হবে এবং ফ্যাসিবাদের প্রশ্নে দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এক থাকতে হবে।

উপস্থাপক ও আইনজীবী মানজুর আল মতিন জাবির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানীর বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তির ভূয়সী প্রশংসা করেন। ১৫ জুলাই বুলেট, টিয়ারশেল, অস্ত্রের মুখে জাবির শিক্ষার্থীরা দুই হাতে দুটি ইট নিয়ে যে বীরত্ব দেখিয়েছে তা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

জাবির বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানা লাকি বলেন, নারীদের ত্যাগ ও অবদানকে যথার্থ মূল্যায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাইনিংয়ের খাবারের মান বৃদ্ধি ও শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধির করতে হবে।

অধ্যাপক ড. লুৎফুল এলাহী বলেন, কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি যদি পুনরায় মাথাচাড়া দেয় তাহলে আমি আবার বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে যাব।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতার পাশাপাশি সফলতা উল্লেখ করে বলেন, আহতদের জন্য সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সেবা দেওয়া হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ ডা. সায়েদুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হচ্ছে, ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার কাজে করছে। গণঅভ্যুত্থানে জাবির অবদান উল্লেখ করে বলেন, যখন আন্দোলন থেমে যাচ্ছিল তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আমাদেরকে প্রেরণা জুগিয়েছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বললে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনীহা প্রকাশ করেন, যা গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে ডেমোক্রেসির কথা বলে বিদেশের দূতাবাসগুলো চাপ প্রয়োগ করছে। এছাড়াও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ চালুর ব্যাপারে ক্যাবিনেট দাবি উত্থাপন করবেন বলে জানান।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ২৪ এর চেতনা পক্ষপাতের নয়, এই চেতনা সকলের। বৈচিত্র্যের নামে বিভাজন করে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। বেনজির-মতিউরের জ্ঞানের কমতি ছিল না, ছিল মূল্যবোধের অভাব তাই মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ তৈরি ২৪ এর চেতনা। গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ও ইতিহাসকে অমর করে রাখতে আর্কাইভ ও ডকুমেন্টারি নির্মাণে এ জাতীয় গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নারী নেতৃত্ব বাড়াতে হবে।

মোঃ আরিফ হোসেন/এমএ

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর