রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলায় স্লেজিংকে (কটুকথা) কেন্দ্র করে আইন ও মার্কেটিং বিভাগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ সন্ধ্যা পৌনে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে দ্বিতীয় দফায় এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে স্টেডিয়ামের সামনে সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়। দুই দফার সংঘর্ষে শিক্ষক-সাংবাদিকসহ দু পক্ষের অন্তত ৩৩ জন আহত হয়েছে। রাবি চিকিৎসা কেন্দ্র ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) সূত্রে আহতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জরুরী সভায় খেলা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক মাফরুহা সিদ্দিকী লিপি বলেন, `প্রাথমিকভাবে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।`
অন্যদিকে, আহত ৮ জনকে রামেকের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে কয়েকজনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানান জরুরী বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের রাউন্ড-১৬–এ মার্কেটিং বিভাগ ও আইন বিভাগের খেলা হয়। এতে মার্কেটিং বিভাগ ১-০ গোলে জয়ী হয়। খেলা চলাকালে উভয় পক্ষের দর্শকেরা স্টেডিয়ামে অবস্থান করছিলেন। গোল হওয়ার একপর্যায়ে উভয় পক্ষ একে-অপরকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিলে বাগ্বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। খেলা শেষে স্টেডিয়াম গেটে আইন ও মার্কেটিং বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী তর্কে জড়ান।
একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্টেডিয়াম চত্ত্বর ত্যাগ করে হবিবুর রহমান হল মাঠে ও মার্কেটিংয়ের শিক্ষার্থীরা টুকিটাকি চত্তরে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হয় এবং প্যারিস রোড প্রদক্ষিন করে দুই পক্ষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সংলগ্ন রাস্তায় মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
তবে, এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা দু পক্ষের মধ্যে অবস্থান নিয়ে মীমাংসার চেষ্টা চালিয়ে যায় কিন্তু ৭:৪০ এর দিকে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা কাচের ছুড়ে মারলে সংঘর্ষের শুরু হয়।
সংঘর্ষের কাচের বোতল, ইট, বাশ ও লাঠিসোঁটার আক্রমণ চালানো হয়। পরে রাত আটটার দিকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটলে পরিস্থিত কিছুটা শান্ত হয়। এ সময় আইন বিভাগে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারাও ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে সংঘর্ষের প্রথম দফায় শিক্ষার্থীদের আক্রমণে আইন বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ও বনিকবার্তার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আবু ছালেহ শোয়েব আহত হয়েছে।
সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, আমি ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিকেল থেকেই দু`পক্ষকে শান্ত করতে কাজ করছিল। কিন্তু উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতিতে পুলিশের আসতে দেরি হয়েছে। তারা সময়মতো এসে পৌছালে হয়ত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সায়েদা আঞ্জু কথা বলেননি। অন্যদিকে মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নুরুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, `প্রশাসনের জরুরী সভায় আগামীকাল সকালে পৃথক সময়ে বিভাগ দুটির সঙ্গে মিটিং করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে এবং আগামীকাল উভয় বিভাগে ক্লাস বন্ধ থাকবে। তবে এ পরিস্থিতিতে খেলা সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে।`
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, `আজকের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আগামীকাল আমরা দুই বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে বসবো। এই ঘটনায় কারা দায়ী, কার দায়িত্ব কতটুকু এর প্রত্যেকটা জিনিস আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করবো। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষার্থে আমরা সবদিক ভেবে সীদ্ধান্ত নিব।
মাফুজুর রহমান ইমন/এমএ