আব্দুল্লাহ আল নাঈম: মামা কই তুই? আমরা পুকুরপাড়ে বসে আছি। তুই চলে আয়, মিল্লাতের ক্যাফেটেরিয়ায় বসি। অনেকদিন পর মিল্লাতে আসছি, চল একসাথে বসে চা-সিঙাড়া খাই। হ্যাঁ, এটাই ক্যাম্পাস জীবনের প্রাণ, প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসের আড্ডা।
কেননা, আড্ডা ছাত্রজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ তাঁর পুরো জীবনে সবচেয়ে আনন্দঘন কিছুসময় পার করে ক্যাম্পাসে আড্ডার মুহূর্তে। গতকাল শুক্রবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় তেমনি এক পরিচিতি আড্ডা গেছে সবার।
উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা পেরিয়ে সবাই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে। কেউ ঢাবি, কেউ রাবি, কেউ চবি কিংবা অন্যকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকালীন সময়ে মাদরাসার ফাযিল শ্রেণিতে অধ্যয়নরত হলেও খুব একটা ক্লাস করা হয় না, তবে পরীক্ষার দিন আসা হয় নিয়মিত। সেই সুবাদে রমজানের দিনে ইফতারের আয়োজনে একত্রিত হওয়ার ব্যাপারটা একদমই স্বাভাবিক।
গতকাল সন্ধ্যায় ক্যাফেটেরিয়ার টেবিলে ইউনিভার্সিটির লাইফ কার কেমন চলছে এটা নিয়ে আলাপ জুড়ে দিয়েছিল জামিল। মারুফ প্রশ্ন তুলেছিল সাবজেক্ট ফ্যাক্ট নাকি বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাক্ট। ভবিষ্যতে কার কেমন ক্যারিয়ার ভাবনা সেই বিষয়ে আলাপ ছুঁড়ে দিয়েছিল নাঈম। স্বদেশ পেরিয়ে বহির্বিশ্বে পড়াশোনায় যেতে চায় সজিদ, আইসক্রিমের ঠান্ডা স্বাদে গল্প জুড়ে দিয়ে ছিল এবিষয়েও। আর সবার আলাপগুলো উপভোগ করছিল ওমর। আড্ডার ফাঁকে ঘটনার মোড় নেয় বিভিন্ন অনুভূতির, হাসি- ধারণা- আগ্রহ- কৌতূহলের।
ক্যাম্পাস একটি শিক্ষার্থীর কাছে আবেগ-অনুভূতি আর ভালোবাসার জায়গা। আড্ডা ছাড়া ছাত্রজীবন যেন রঙহীন ধূসর বর্ণের মতো। এই সময়টায় যাঁরা বন্ধু হয়, যাঁদের মধ্যে গড়ে উঠে বন্ধুত্বের সম্পর্ক, সেটা ভালো মজবুত আর টেকসই হয়।
কারণ, তখন থেকেই যেন বন্ধু আড্ডা, শিল্প-সাহিত্য ও ভালোবাসার ছোঁয়ায় ঘেরা দিনপার, যা একজন মানুষের জন্য অনেক বেশি দরকার। কখনো সমকালীন প্রেক্ষাপট, রাজনীতি, কখনোবা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বিস্তর আলাপে মেতে ওঠে এসব আড্ডা। পড়ন্ত বিকেলে বা সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়ায় ফুটে ওঠে এক দারুণ প্রতিচ্ছবি।
তা’মীরুল মিল্লাতের ক্যাফেটেরিয়ার দেয়ালগুলো সত্যিই আকর্ষণীয় ও চমকপ্রদ করে তৈরি করা হয়েছে। তা যেকেউ পছন্দ করতে বাধ্য। ফটোগ্রাফি, সেলফির যুগের সাথে সমান্তরাল বজায় রেখেছে। সোনালী আলোর বৈদ্যুতিক বাতি আর লাল ইটের মিশেলে শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইল ছবির সূচনা হয় এখান থেকেই। ক্যাফেটেরিয়ার সাজানো গোছানো পরিবেশটাও নজর কাড়ছে সবার। আমন্ত্রণ রইল, কেউ না দেখে থাকলে একবার হলেও দেখে আসার।
লেখক: শিক্ষার্থী, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা, টঙ্গী ক্যাম্পাস।