সোমবার, মে ১৩, ২০২৪
spot_img

নওগাঁতে সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী জগদ্দল মহাবিহার

জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ: নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সুপ্ত অবস্থায় লুকিয়ে আছে প্রাচীন সমৃদ্ধ অনেক নিদর্শন। এর মধ্যে জগদ্দল মহাবিহার একটি। জগদ্দল মহাবিহার নওগাঁ জেলা সদর থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে এবং জয়পুরহাট জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দল গ্রামে অবস্থিত। প্রাচীন স্থাপত্যশিল্পের ব্যতিক্রমধর্মী কিছু সংযোজন রয়েছে এই জগদল বৌদ্ধ বিহারে।

ঐতিহাসিক সূত্রমতে, রাজা রামপাল ভীমকে যুদ্ধে পরাজিত করে পৈতৃক কার্য উদ্ধার করে এ এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য জগদল বিহার স্থাপন করেন। জনশ্রুতি রয়েছে, রাজা রামপাল পরবর্তী সময় জগদলকে রাজধানী করে তার নাম রেখেছিলেন রামাবতী। এটি রামাবতী পাল বংশের শেষ রাজধানী। রাজা রামপাল ১৭ জন পাল বংশীয় রাজার মধ্যে চতুর্দশ।

কথিত আছে, রাজা রামপাল একাদশ শতাব্দীতে এ বিহার নির্মাণ করেন। জগদ্দল বিহার বৌদ্ধ সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এখানে বহু বৌদ্ধ পণ্ডিত ছাত্র একত্রে ধর্মচর্চার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এ বিহার সমগ্র উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিতি ছিল। এখানে শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করা হতো। 

ধারণা করা হয়,১০৭৭ থেকে ১১২০ খ্রিষ্টাব্দে পাল বংশ এ অঞ্চল শাসন করে। রাজা রামপাল একাদশ শতাব্দীতে এই বিহার নির্মাণ করেন এবং এখান থেকেই পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারসহ অন্যান্য স্থান দেখাশোনা করতেন বলে অনেকে ধারণা করেন। পাল শাসনামলের শেষার্ধে স্থাপিত প্রাচীন বাংলার শিক্ষা ও দীক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এই বিহারে বিভূতি চন্দ্র, আচার্য দানশীল, আচার্য মোক্ষকর গুপ্ত, শুভাকর গুপ্তের মতো পণ্ডিতগণ শিক্ষা ও গবেষণার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। জগদ্দল বিহারের আচার্য মোক্ষকর গুপ্ত তর্কভাষা নামে বৌদ্ধ ন্যায়ের ওপর একটি পুঁথি লিখেছিলেন।

জগদল বিহারের পূর্ব-পশ্চিমে ১০৫ মিটার দীর্ঘ এবং উত্তর-দক্ষিণে ৮৫ মিটার দীর্ঘ ও চার দিকের ভূমি থেকে ৫ দশমিক ৪০ মিটার উঁচু।

১৯৯৭ সালে জগদ্দল মহা বিহারে প্রথম বারের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ হয়। এ সময় একটি বিহারের আংশিক স্থাপত্যকাঠামো ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০২৩ সালে জগদল বিহারের ৩২টির বেশি স্থানে খনন করে অলংকৃত মূর্তি, ১৩৪টি প্রত্নতত্ত্ব, ১৪টি ব্রোঞ্জের মূর্তি, পোড়ামটির টেরাকোটা, ৩৩টি ভিক্ষু কক্ষ ও ৮ মিটার বাই ৮ মিটারের হলঘর পাওয়া গেছে। আবার একমাত্র এই বিহার থেকেই ৬০ সেন্টিমিটার পুরুত্ব বিশিষ্ট বৌদ্ধ বিহারের ছাদের ভগ্নাংশ ও গ্রানাইট পাথরের পিলার পাওয়া গেছে। ইট ও মৃত্পাত্রের টুকরা থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা করেন, নিচে বিশাল ধ্বংসাবশেষ লুকিয়ে আছে। ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সম্ভাব্য তালিকায় জগদল মহাবিহারের নাম রয়েছে।

২০১৩ সালে বিহারের খননে জগদল বিহারের পশ্চিম বাহুর একটি খনন করতে গিয়ে একটি সুড়ঙ্গের মধ্যে পাওয়া যায় ১৩টি ব্রোঞ্জের বৌদ্ধমূর্তি। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, জগদল বিহারই লোটাস (পদ্ম মহাবিহার) বিহার। ২০১৪ সালে বিহারের উত্তর বাহু খননে বেরিয়েছে পোড়ামাটির টেরাকোটা, যা বিহারের দেওয়ালে সারিবদ্ধভাবে লাগানো রয়েছে।

মোঃ এ কে নোমান

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর