বৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য দেশব্যাপী উদ্ভুত হওয়া আন্দোলনের মাধ্যমে প্রায় এক মাসের বেশি সময় উত্তপ্ত ছিলো দেশের রাজপথ। প্রথমদিকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে গেলেও একপর্যায়ে সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেয় সেখানে। আর বাদ যায়নি এইচএসসি-২০২৪ এর পরীক্ষার্থীরাও। আন্দোলনে স্বশরীরে অংশগ্রহণ করে পরীক্ষার্থীরা।
গত ১৮ জুলাই থেকে দেশজুড়ে সহিংসতাকে ঘিরে কয়েক দফায় স্থগিত করা হয় পরীক্ষা। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায় প্রায় ৮০ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন থানায় আটক ছিলো যারা পরবর্তীতে ছাড়া পায়। এমনকি প্রাণ হারায় কয়েকজন। অনেকে আহত হয়। এসব তথ্যানুযায়ী পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ স্পষ্ট।
দেশের একটি সংবাদমাধ্যম এর তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর পর রুটিন মেনে মোট ৮ দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ১৫টি বিষয়ের (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ মিলিয়ে) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৮টি বিষয়ের লিখিত উত্তরপত্র প্রথম কিস্তিতে স্ব স্ব বোর্ডে জমা পড়েছে। ১৪ ও ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত সাতটি বিষয়ের উত্তরপত্র স্ব স্ব কেন্দ্রের অধীনস্থ থানার মালখানায় সংরক্ষিত ছিল। সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় কিস্তিতে উত্তরপত্র বোর্ডে না পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে থানার মালখানায় এসব বিষয়ের উত্তরপত্র আটকা পড়ে।
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বিভিন্ন থানায় আগুন দেয়াসহ বিভিন্ন থানা লুট করে দুর্বৃত্তরা। যার ফলে বিভিন্ন থানায় মজুত থাকা ১৪ ও ১৬ জুলাই এর উত্তরপত্র এবং পরবর্তী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পুড়ে গেছে বলে জানা যায়। এমতাবস্থায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছি আমরা পরীক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয়, করোনার কারণে সৃষ্ট সংকটের বিরূপ প্রভাবে সময়স্বল্পতায় পড়তে হয় এই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। সে অনুযায়ী ৭০% সিলেবাস নিয়ে অনেকটা কষ্টসাধ্য কোনোরকম গুছিয়ে উঠে পরীক্ষায় বসি আমরা। কিন্তু সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আন্দোলনের কারণে এলোমেলো হয়ে যায় আমাদের প্রস্তুতি। পাশাপাশি মাথা ভর্তি দুশ্চিন্তা। কারণ এইচএসসির উপর নির্ভর করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। হয়তো এখন পুড়ে যাওয়া উত্তরপত্রের জন্য নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে পাশাপাশি নতুন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা যেতে পারে কিন্তু সেটিও সময়সাপেক্ষ।
এদিকে যত দিন গড়িয়ে যাচ্ছে আমাদের দুশ্চিন্তার জগৎ ততোই অসাড় হচ্ছে। কারণ আমরা এখনও সুস্পষ্ট কোনো বিবৃতি পাইনি আমাদের নিয়ে। তবে আমাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে?
তবে কী আমাদের এভাবেই বারবার পিঁছিয়ে পরতে হবে? এখন নতুন করে পরীক্ষা নেয়া কিংবা সাবজেক্ট ম্যাপিং করে বিভাগভিত্তিক বিষয় বাদে প্রথম পাঁচটি আবশ্যক বিষয়ের পরীক্ষা থেকে নম্বর সংগ্রহ করে ফলাফল প্রণয়ন করা এ দু’টি পদ্ধতিতে সমাধান করা যেতে পারে আমার মনে হয়।
এদিকে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে আপনাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। নতুনভাবে দেশ বিনির্মাণে অংশ নিতে চাই আমরাও। তাই যত দ্রুত সম্ভব আপনাদের সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা করছি। এমন অনিশ্চয়তায় দিন গুণছি নতুন কিছু শোনার জন্য।
স্বপক্ষে
রেশমা আক্তার রিয়া
এইচএসসি পরীক্ষার্থী-২০২৪