বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০২৪
spot_img

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রাজাকারদের সহযোগী জাল কালুর বিচার দাবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া ব্যক্তি ও নিরীহ মানুষের বাড়িতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের নামোসুর্ঘনারায়নপুর গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেয় রাজাকার বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা।

নামোসুর্ঘনারায়নপুর গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন, প্রয়াত স্কুলশিক্ষক মকবুল হোসেন মাস্টারের মেজো ছেলে আলহাজ্ব আব্দুল মাতিন ওরফে জাল কালু। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কয়েকটি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ঘটনার ৫৩ বছর পর এসে এই অগ্নিকাণ্ডের বিচার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে নামোসুর্ঘনারায়নপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েকটি নিরীহ মানুষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে স্থানীয় রাজাকার বাহিনী। এই রাজাকারদেরকে বাড়িতে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডের মূলহোতা ছিলেন আব্দুল মাতিন ওরফে জাল কালু। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নেতৃত্ব দেন তিনি।

জানা যায়, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও ঘটনার কথা মনে করে ব্যথিত হন ক্ষতিগ্রস্ত ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা। তাদের দাবি, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রামের সুজন একাডেমিতে থাকা রাজাকারদের ক্যাম্প থেকে তাদেরকে ডেকে এনে আব্দুল মাতিন ওরফে জাল কালুর দেখানো বাড়িতে আগুন দিতো রাজাকাররা। আগুন দিয়ে বাড়িঘর পোড়ানোর পাশাপাশি বাড়ি থেকে লোকজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে অত্যাচার করতো তারা।

নামোসুর্ঘনারায়নপুর গ্রামের মৃত জিল্লার বিশ্বাসের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপরপ্রাপ্ত শিক্ষক বেনজির আহমেদ (৭৩) বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে যায়। ভারতে প্রশিক্ষণে থাকাকালীন সময়ে এরই মধ্যে জানতে পারি, আমাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে রাজাকার বাহিনী। তাদের এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন আব্দুল মাতিন ওরফে জাল কালু। এমনকি আমাদের বাসা থেকে আমার চাচা আব্দুস সালাম বিশ্বাসকে আটক করে নিয়ে যায় রাজাকার বাহিনী।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনা জানতে পেরে আমরা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের মাধ্যমে তাদেরকে হুমকি দেয়া হয়, আমার চাচার কিছু হলে আব্দুল মাতিন ওরফে জাল কালুসহ রাজাকার বাহিনীকে ঘুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়া হবে। পরবর্তীতে হুমকি দেয়ার পর চাচাকে ফেরত দিয়ে যায় তারা। নির্মমভাবে গ্রামের বাড়িঘর পোড়ানোতে নেতৃত্ব দিয়েছিল আব্দুল মাতিন ওরফে জাল কালু।

অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য নামোসুর্ঘনারায়নপুর গ্রামের ফজলুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে গোলাম মোস্তফা কালু জানান, মাতিন ওরফে জাল কালুর ইসারাতেই তার উপস্থিতিতে আমাদের বাড়িতে আগুন দেয় রাজাকার বাহিনী। সেসময় মাতিন ওরফে জাল কালু রাজাকার বাহিনীর সাথেই থাকতো ও তাদের সাথে তার সক্ষতা ছিল। তার বাবা এলাকার একজন স্বনামধন্য শিক্ষক ছিলেন, তাই যুদ্ধের পর অনেকেই তাকে শাস্তি দেয়ার কথা বললেও তার বাবার কারনে তার শেষ রক্ষা হয়।

একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হান্নান বলেন, দিনের বেলায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জাল কালুর নির্দেশনায় আমাদের খড়ের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় পুরো বাড়ি। গ্রামেই ছিল রাজাকারদের ক্যাম্প। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল মাতিন ওরফে জাল কালুর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি জানান, যুদ্ধের সময়ে রাজাকার বাহিনীর সাথে মিলে এলাকায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, টান্ডব ও লুটপাট চালিয়েছে আব্দুল মাতিন ওরফে জাল কালু। আমরা তার বিচার ও শাস্তি চাই। আমরা চাই, তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হোক।

এবিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি আব্দুল মতিন ওরফে জাল কালু। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খাইরুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রকাশ্য রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে স্বাধীনতা বিরোধী কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নারায়ণপুর গ্রামে বাড়িঘরে আগুন, লুটপাট চালিয়েছে আব্দুল মতিন। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার থাকার সুবাদে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া রাজাকারদের তালিকায় তার নাম দিয়েছি। প্রকাশ্যে সে (আব্দুল মতিন) নানরকম স্বাধীনতা বিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল।

হানিফ মেহমুদ/এস আই আর

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর