মেহেদী হাসান মিরাজ,তেঁতুলিয়া: হঠাৎ খাজনা বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ তুলে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মরিচ ও সুপারি কেনাবেচা বন্ধ করে দিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হঠাৎ খাজনা বাড়িয়ে দেয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছে তারা। এতে বিপাকে পড়েছে চাষি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ খাজনা বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ তুলে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মরিচ ও সুপারি কেনা-বেচা বন্ধ করে দিয়েছে চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
হঠাৎ খাজনা বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ তুলে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মরিচ ও সুপারি কেনা-বেচা বন্ধ করে দিয়েছে চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মরিচ ও সুপারি কেনাবেচা বন্ধ করে দেন তারা।
জানা গেছে, উপজেলার মরিচ ও সুপারি কেনাবেচার সর্ববৃহৎ হাট শালবাহান। এ হাটে সপ্তাহের দুইটি হাটের (শনিবার ও বুধবার) মধ্যে প্রতি হাতে প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার মরিচ ও সুপারি কেনাবেচা হয়। এ হাটে মরিচ, সুপারি, ভুট্টা, শাক সবজি, ধান, পাটসহ নানা ফসল কেনাবেচা করেন চাষি এবং ব্যবসায়ীরা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করেন এই হাটে। হঠাৎ বুধবার থেকে শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদ মরিচ ও সুপারিতে খাজনা আদায়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এতে নতুন খাজনা নির্ধারণের প্রতিবাদে মরিচ ও সুপারি ব্যবসায়ীরা কেনাবেচা বন্ধ করে দেয়।
আরও জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার চাষির মধ্যে মরিচ ও সুপারি চাষি রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার। সুপারি ও মরিচ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ৫ হাজার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসায়ী।
চাষিদের অভিযোগ, ৩ টাকার পরিবর্তে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা করে খাজনা নির্ধারণ করেছে ইউনিয়ন পরিষদ। তাই ব্যবসায়ীরা মরিচ ও সুপারি কেনা বন্ধ করেছে। অন্যদিকে ব্যবসায়িরা প্রতিমণ মরিচে এক কেজি করে বেশি নিচ্ছেন। ফলে লাভের থেকে লোকসান হচ্ছে তাদের। তারা মরিচ বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন।
রওশনপুর গ্রামের মরিচ চাষি আবু তালেব বলেন, ‘একটি মরিচের গাছের পেছনে খরচ পড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা। তারপর প্রতি কেজিতে গান্ডি দিতে হয় ৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা প্রতিমণে অতিরিক্ত নেয় ১ কেজি। তাহলে আমরা যাব কোথায়। আমাদের তো লোকসান হচ্ছে। এই রোদে পুড়ে মরিচ চাষ করে কী লাভ হলো। সার কিটনাশক, শ্রমিকের মজুরি সব বেড়ে গেছে। আজ মরিচ বিক্রি করতে পারলাম না। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা মাঠে মারা যাব।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলা প্রশাসন থেকে ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে কৃষকদের বাজারে মরিচ ও সুপারি বিক্রয়ে ইউনিয়ন পরিষদে দেয়ার জন্য খাজনা নির্ধারণ করে দেয় কেজি প্রতি ৩ টাকা। কিন্তু জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে ইউনিয়ন পরিষদ একতরফা ভাবে ২ টাকা বাড়িয়ে ৫ টাকা খাজনা আদায় করছে।
মরিচ ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন জানান, অন্য কোনো হাটে এত বেশি খাজনা আদায় করা হয় না। আগে আমরা ট্রাক প্রতি ২শ’ টাকা খাজনা দিতাম। এখন এখন প্রতি ট্রাকে ৬ হাজার টাকা খাজনা দিতে হবে। এতে করে আমরা তো লাভ করতে পারব না। তাই মরিচ কেনা বন্ধ করেছি। এদিকে অতিরিক্ত এক কেজি মরিচ নেয়ার বিষয়টি জানতে গেলে তিনি আরও বলেন, সব হাটেই চাষিদের কাছ থেকে মণ প্রতি অতিরিক্ত ১ কেজি করে নেয়া হয়। কারণ অনেক সময় তারা পঁচা মরিচ দেয়।
ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ বলছে, কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খাজনা বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে।
শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘খাজনার পরিমাণ বেশি হয়েছে। এ অভিযোগ ব্যবসায়ীরা এখনও করেনি। তারা বললে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু চাষিদের কাছ থেকে তারা প্রতি মণে অতিরিক্ত ১ কেজি করে বেশি নিচ্ছে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি।’