দীর্ঘদিন থেকেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সংকট বিরাজ করছে। গত ২৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তিনজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আপিল বিভাগে আপাতত বিচারপতি সংকট নিরসন হয়েছে। তবে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগে মাত্র ৮৪ জন বিচারপতি রয়েছেন। এর মধ্যে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় অনেক আগে থেকেই তিনজন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে বিরত রেখেছেন প্রধান বিচারপতি।
কয়েক বছর আগেও হাইকোর্ট বিভাগে ১১০ জনের বেশি বিচারপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। উচ্চ আদালতে মামলাজট আগের থেকে বাড়লেও বিচারপতির সংখ্যা বাড়েনি। বরং আরো কমেছে। এমন অবস্থায় হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। শিগগিরই হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানিয়েছে, এবার হাইকোর্ট বিভাগে একসঙ্গে ১৫ জনের মতো বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। নিয়োগের ক্ষেত্রে সততা, পেশাগত দক্ষতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি অবিচলতা—এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বরাবরের মতোই রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সদস্য ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা—এ তিন ক্যাটাগরি থেকে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে।
উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ প্রসঙ্গে সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্য বিচারকদের নিয়োগদান করবেন।’
সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির পরামর্শ ও প্রয়োজন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সংবিধানের ৯৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ ও নিয়োগ করে থাকেন। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “প্রধান বিচারপতি (যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হইবেন) এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যে-রূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনবোধ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে।” সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়।
বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিচারপতি নিয়োগের এখতিয়ার তো মহামান্য রাষ্ট্রপতির। তিনি হয়ত হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। আমার মনে হয় হাইকোর্ট বিভাগে তিনি শিগগিরই বিচারপতি নিয়োগ দেবেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের বিষয় নিয়ে শিগগিরই মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করব।
হাইকোর্টের নতুন বিচারপতি হিসেবে কারা নিয়োগ পাচ্ছেন—এ নিয়ে আইনাঙ্গণে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। নিয়োগের তালিকায় আলোচিত হচ্ছেন: রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তাদের মধ্যে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিমা কে হাকিম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান মনির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী,ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুর উস সাদিক চৌধুরী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আব্দুর রাফায়েল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কামরুল আহসান খান আসলামের নাম সম্ভাব্য বিচারপতি হিসেবে আলোচনায় রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আমিনুল হক হেলাল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার এম শফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক রাজু, অ্যাডভোকেট বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট এ বি এম নূর -এ আলম (উজ্জ্বল), টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার আনিতা গাজী রহমানের নাম ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী, ঢাকা মহানগরের সাবেক দায়রা জজ মো. আসাদুজ্জামান, দুদকের মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন) মীর রুহুল আমীন ও গাজীপুরের জেলা ও দায়রাজজ মোমতাজ বেগমের নাম আলোচিত হচ্ছে।