মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, ঠাকুরগাঁও: একদিকে খরা, অন্যদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে ঠাকুরগাঁওয়ে বিরূপ প্রভাব পড়ছে ফসলের মাঠে। প্রচণ্ড এই গরমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শাকসবজির ক্ষেত। তাপে ঝলসে যাচ্ছে গাছের কুঁড়ি ও পাতা।
কৃষকরা জানান ,অনাবৃষ্টি ও খরার হাত থেকে ফসল রক্ষায় সকাল-বিকাল ক্ষেতে পানি দিয়েও গাছ বাঁচাতে পারছেন না। এতে সবজির উৎপাদন নিয়ে শঙ্কিত তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যমতে, চলমান গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদের তালিকায় আছে লাউ,মিষ্টি কুমড়া চিচিঙ্গা, ধুন্দল ,করলা, টমেটো, শসা ও মরিচসহ প্রায় সব ধরনের শাক সবজি। তবে তীব্র গরমসহ রোদের তাপে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে এই সব ফসলি মাঠে।
সদরের খড়ি বাড়ি এলাকার কৃষক রেজাউল করিম বলেন,তীব্র গরমে পুড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে তার ৫ বিঘা জমির মিষ্টি কুমড়া ক্ষেত। সকালে পানি দিলে দুপুরের আগেই শুকিয়ে যায়। বৃষ্টি না হলে কোনও গাছই টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
একই এলাকার সবজি চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন,অতিরিক্ত খরার কারণে সেচ কাজে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সেচ লাগছে জমিতে। কৃষিকাজে শ্রমিকও লাগছে বেশি। এবার বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে।
সদরের আকচা এলাকার কৃষক ও ইউপি সদস্য মকলেছুর রহমান জানান,মিষ্টি কুমড়াক,করলা, টমেটো, শসা, মরিচ ও লাউয়ের মতো সবজি গাছগুলো শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। কিছু কিছু গাছের পাতার রস শুকিয়ে পাতা কুঁকড়ে গাছ মরে যাচ্ছে। রাজাগাঁও ইউনিয়নের বাদামচাষি রফিকুল দুদু মিয়া বলেন, রোদ আর তাপমাত্রায় বাদাম গাছ শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। ভয়াবহ এই তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে ফলন কাঙ্খিত ফলন হবে না।
৫৬শতক জমিতে চিচিঙ্গা, ধুন্দল ,করলাসহ বিভিন্ন জাতের শাক লাগিয়েছেন সদরের ঢোলারহাট এলাকার কৃষক দুলাল হোসেন । তীব্র রোদে গাছগুলো পুড়ে যাচ্ছে জানিয়ে হামিদুর বলেন, এ বছর এমনিতেই চাষাবাদে উৎপাদন খরচ কয়েক গুন বেশি। এখন ফলন ধরার সময়ে এসে গরমে বিবর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে মাঠে লাগানো বিভিন্ন সবজি গাছ। সকাল-বিকাল পানি দিচ্ছি। তারপরও গাছগুলা শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক এআইপি আহসান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, এ বছর তীব্র তাপদাহের কারণে কৃষকের বিভিন্ন সবজির ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে, আবারও সাধারণ সেচের তুলনায় বেশি সেচ দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে।
জেলায় চলতি মৌসুমে পাঁচ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানালেন ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন,এখনও খরিব এক মৌসুমের আবাদ চলছে। চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে শাকসবজির গাছগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ফসল রক্ষায় কৃৃষকদের সার্বক্ষনিক পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। বিশেষ করে জমিতে রসের ঘাটতি যেনো না হয় সে দিকে কৃষকদের সেচ ব্যবস্থা চালু রাখাসহ নানা রকম পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।