রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
spot_img

একই জমিতে দুই ফসল, লাভবান হচ্ছে কৃষক

মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ায় সাথী ফসলের চাষাবাদ ব্যাপক হারে বাড়ছে। বর্তমানে একই জমিতে দুই ধরনের ফসল চাষ করা হচ্ছে ,এতে যেমন বাড়তি আয় হচ্ছে তেমনই লাভবান হচ্ছে কৃষকরা।

জানাগেছে, সদর উপজেলার রুহিয়া থানার কৃষকরা আগে ফসলি জমিতে শুধু ভুট্টা বা গম চাষ করতেন। তাতে খুব একটা লাভ হতো না তাদের। এখন তারা মিষ্টিকুমড়ার বা চাল কুমড়ার পাশাপাশি জমিতে চাষ করছেন সাথী ফসল। সাফলতাও পাচ্ছেন। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে একই জমিতে একাধিক ফসল চাষ।

সরেজমিনে রুহিয়া থানার রাজাগাঁও ইউনিয়ন এবং ঢোলারহাট ইউনিয়ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কিছু জমিতে সাথী ফসল হিসেবে লাগানো হয়েছে দুই রকমের ফসল। এর মধ্যে সারি সারি মিষ্টিকুমড়া বা চাল কুমড়ার ফাঁকে ফাঁকে লাল রঙের লাল শাক কোথাও আবার সবুজ রঙের পাট শাকসহ নানা ধরনের শাক-সবজির চাষ।

কথা হয় রাজাগাঁও ইউনিয়নের বড়দেশ্বরী এলাকার কৃষক খতিবুর রহমান, আতাউর রহমান, তৈয়বুর রহমানের সাথে, তারা জানান ,আগে শুধু একটি একই জমিতে একসঙ্গে দুই ফসল চাষ করতাম না, আমরা শুরু একটি ফসল চাষ করতাম । তাতে খুব একটা লাভ হতো না। এখন এক সাথে মুল ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষে আমরা লাভবান হচ্ছি।

এ বছর তিনি এক বিঘা জমিতে সাথী ফসল হিসেবে প্রথমে সাড়ে ৫হাজার টাকা খরচ করে আঁখ লাগানোর পরে, আখের ফাঁকে ফাঁকে আলু চাষ করেছিলেন। সব মিলিয়ে আলুতে খরচ হয়েছিল ১৩ হাজার টাকা, বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজারে। যেহুত আঁখ চাষে ৭-৮মাস সময় লাগে তাই একই জমি কাজে লাগিাতে আলু তোলার পর, আখের ফাঁকে ফাঁকে লাল শাক ও পালং শাক বুনেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে লালশাক তুলে বিক্রি শুরু করেছেন । এখন আখের বয়স ১মাস,এই আখ তোলার পর ১লক্ষ টাকায় বিক্রি হবে। তাতে করে তার বাড়তি আয় হচ্ছে,এতে লাভবান হচ্ছেন তিনি । তিন বছর ধরে তিনি এভাবেই চাষাবাদ করছেন। তার দেখাদেখি একই এলাকার অমুল্য,বিকাশ,ধলু,মেহেদী সহ অন্য কৃষকরাও সাথী ফসল হিসেবে একই জমিতে দুই ফসল চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন।

ঢোলারহাট ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকার
কৃষক হবিবর রহমান জানায়,তার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়া এবং চাল কুমড়া চাষ করেছি। এই মিষ্টি কুমড়া এবং চাল কুমড়ার ফাঁকে জায়গা গুলো প্রায় বিশ থেকে পঁচিশ দিন পড়ে থাকতো। এবার তিনি এর ফাঁকে ফাঁকে লাল শাক, পাট শাক চাষাবাদ করেছেন। এতে মাত্র ২০-২৫ দিনের মধ্যে শাক তুলে বিক্রি করেন,পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া এবং চাল কুমড়াও হবে। তাতে বাড়তি আয় হবে তার। তার মতো স্থানীয় অনেকেই আলুর সঙ্গে মিষ্টি কুমড়র চাষ করছেন। আবার অনেকে সাথী ফসল হিসেবে রাখছেন অন্যান্য সবজি,এতে তারাও বাড়তি আয় করতে পারছে।
ঢোলারহাট ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তা জগদীশ শর্মা বলেন, এক ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসেবে শাক সবজি চাষ করা অবশ্যই কৃষকের জন্য একটা ভালো উদ্যোগ।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এক ইঞ্চি জমিও খালি না রাখতে তাই আমরা কৃষি বিভাগ কৃষকের মাঝে উৎসাহ দিচ্ছি। একটি জমিতে সাথী ফসল চাষে অনেক কৃষক লাভবান হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক মেহেদী আহসান উল্লাহ চৌধুরী বলেন সাথী ফসল হিসেবে এলাকায় বহু কৃষক চাষ করেছেন এতে করে কৃষকের আয় বাড়ছে। এতে করে লাভবান হচ্ছে শতশত কৃষক।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল বলেন, ফসলি জমিকে দুই ফসলি করতে কৃষকদের উদ্ববুদ্ধ করা হচ্ছে। তাছাড়া সাথী ফসল চাষাবাদের প্রতি কৃষকদের আগ্রহও অনেক। দিনদিন এই এলাকার কৃষকদের সাথী ফসলে আগ্রহ বাড়ছে,এটি খুবই লাভ জনক।

তিনি বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দাভাব ,তা থেকে রেহাই পেতে হলে আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হতে হবে। আমদানী নির্ভর না হয়ে, উৎপাদন বাড়াতে হবে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক কৃষি খাতকে উন্নয়নমুখী ও লাভজনক করতে কাজ করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতা এই সাথী ফসল চাষ। সাথী ফসল হিসেবে প্রাধান্য পাচ্ছে সবজি।

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর