নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: বান্ধবীকে গাঁজা সেবনের ভিডিও পাঠানোকে কেন্দ্র করে ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ভাষা শহীদ আবদুল সালাম হল ভাঙচুরের ঘটনায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মৃন্ময় কৃষ্ণ সাহাকে (সৌরভ সাহা) তিন বছরের জন্য বহিষ্কার ও বিশ হাজার টাকা জরিমানা এবং ২০২২ সালের ২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাসনালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার দায়ে এক বছরের জন্য আবারও বহিষ্কার করা হয় তাকে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত বহিষ্কার আদেশ থাকা সত্তেও একটি সেমিস্টার ছাড়া প্রশাসন ও ছাত্রলীগের ক্ষমতাবলে বহিষ্কার আদেশ উপেক্ষা করে বাকি প্রতিটি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে তিনি।
চার বছরের বহিষ্কার আদেশ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় বসার অনুমতি প্রসঙ্গে নোবিপ্রবির উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. সফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন বছরের বহিষ্কার আদেশ যেটা ছিলো সেটার জন্য সাবেক উপাচার্য স্যার থেকে পরীক্ষার অনুমতিপত্র আনলে আমরা তাকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিই। অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এমন কোনো অনুমতিপত্র দেখাতে পারেনি।
পরবর্তীতে আবারও এক বছরের দেওয়া বহিষ্কারের শাস্তি সম্পর্কে জানা যায়, বিভাগীয় চেয়ারম্যান (সাবেক) অধ্যাপক ড. মো. রোকনুজ্জামানের অনুরোধে একাডেমিক কাউন্সিলে তা কমিয়ে ছয় মাস করা হয়। সে জন্য তার একটি সেমিস্টার (বর্ষ-১, টার্ম-২) পরীক্ষায় সে বসতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে একটি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকলে সে শিক্ষার্থীকে তার পরবর্তী জুনিয়র ব্যাচের সাথে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয়। তা উপেক্ষা করে একই ব্যাচের সাথে পুনরায় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া এবং পরীক্ষার রেজাল্ট বের হওয়ার বিষয়ে নোবিপ্রবির উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, তখন ঐ বিভাগের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান ব্যক্তিগত কারন দেখিয়ে তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে চাইলে আমিও না দেখে তাতে স্বাক্ষর করে দিই। ফলে বিষয়টি আমার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী অধ্যাপক শাহনাজ আক্তার বলেন, যেহেতু নতুন প্রশাসন আর আমিও আগে চেয়ারম্যান ছিলাম না সেহেতু আমার মনে হয় এই বিষয়গুলো নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা দরকার।
নোবিপ্রবি প্রক্টর এ. এফ. এম আরিফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও তার বিভাগের কোর্স কোর্ডিনেটরসহ ব্যাপারটা নিয়ে আইন বিরুদ্ধ কাজ করেছে। কারন একজন কোর্স কোর্ডিনেটর একজন ছাত্রের কোর্স রেজিস্ট্রেশনের সময় স্বাক্ষর করে। ওনার কাছে নিশ্চয় বহিষ্কারের চিঠিগুলো আসার কথা। সে সব জানার কথা।
এ সকল বিষয়ে জানতে চাইলে বহিষ্কৃত মৃন্ময় কৃষ্ণ সাহা বলেন, আমাকে যে তিন বছরের বহিষ্কার দেওয়া হয়েছিল এটা ভুল কথা। পরে তা সংশোধন করে এক বছরের দেওয়া হয় ও এটা প্রশাসনিকভাবে উঠে যায় এবং এটার শাস্তি হিসেবে আমি সম্পূর্ণ একটা সেমিস্টার দিতে পারিনি। একটি সেমিস্টার না দিয়ে কিভাবে আবার নিজের ব্যাচের সাথে পুনরায় একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যায় এ বিষয়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা প্রশাসনিকভাবে হয়েছে কোন রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে না।
উল্লেখ্য, মৃন্ময় কৃষ্ণ সাহা নোবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান শুভর অনুসারী ও নোবিপ্রবি ভাষা শহীদ আবদুল সালাম হল শাখা ছাত্রলীগের পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক। আবাসিক হল ভাংচুর, মাদক সেবন, বহিষ্কার, নিজ ব্যাচের জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মানসিক নিপীড়ন, সিনিয়রদের হুমকি ও অপমান, শিক্ষকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরন, ধমীর্য় অনুভূতীতে আঘাত করে ফেসবুকে পোস্ট করা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতা ও এ আন্দোলনে যুক্ত থাকা জুনিয়র শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে গত ১০ সেপ্টেম্বর তার বিভাগের সহপাঠীরা তাকে ব্যাচের সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম ও যাবতীয় পরীক্ষা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। পরবতীর্তে ১৫ সেপ্টেম্বর সে তার চলমান চতুর্থ সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করলে সে কোর্সের খাতা মুল্যায়ন স্থগিত করতে তার ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন জানায়।
সাজিদ খান/এস আই আর