রবিবার, মে ১২, ২০২৪
spot_img

ইবিতে পরতে পরতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি, মননবোধে চিরন্তন ও চিরঞ্জীব

ইবি প্রতিনিধি: “কোন ব্যক্তির মৃত্যু হয় না, যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে তাঁর কীর্তি বেঁচে থাকে।” এরই প্রেক্ষিতে আপোষহীন এক নেতার নেতৃত্বে  বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধ এই শব্দ তিনটিকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করার কোনো সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশের প্রায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে তুলেছে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত প্রতিকৃতি, তৈরি করেছে গবেষণাগার, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও বঙ্গবন্ধু চেয়ারসহ নানান চিত্র। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ  কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)ও অন্যতম। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে মনে প্রাণে ধারণ করে এগিয়ে চলছে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে তার ছবি সংবলিত বিভিন্ন স্থাপনা, বঙ্গবন্ধু হল, বঙ্গবন্ধু কর্নার, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার তৈরি করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একরের এই ক্যাম্পাসটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে দেখা মিলবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতির নানা নিদর্শন।

মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরাল

‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরাল: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন প্রবেশমুখেই স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরাল। ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ এটি উদ্বোধন করেন। এটি দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং সারা বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুজিব ম্যুরাল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

খোদাই করা পাথর ও টাইলসের তৈরি এই ম্যুরালটির মূল স্থাপনার দৈর্ঘ্য সিঁড়িসহ ৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৮ ফুট। বেদির ওপর নির্মিত শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির দৈর্ঘ্য ২৬ ফুট এবং প্রস্থ ১৭ ফুট। বেদিসহ অন্যান্য জায়গাগুলোতে উন্নতমানের টাইলস স্থাপন করা হয়েছে।

তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতির পিতার আদর্শ সঞ্চারিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই ভাস্কর্যটি। এটি শিক্ষার্থীদের মাঝে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করছে। দেশের বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে এই ম্যুরালের পাদদেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়ে থাকে। এছাড়া বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের দাবি জানানোর জন্যও এই স্থানটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল: এদিকে বঙ্গবন্ধুর নামে ১৯৯৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ প্রান্তে প্রায় ৫ একর জায়গাজুড়ে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখানে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় মোট ৮টি ব্লক রয়েছে। হলের সম্মুখে উত্তর পাশে রয়েছে দুটি সিঁড়ি বিশিষ্ট বিশালাকৃতির দৃষ্টিনন্দন পুকুর।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ফটকের সামনে বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল উদ্বোধন করেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী। ম্যুরালগুলোর একটি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবি সংবলিত যা মুক্তির আহ্বান নামে পরিচিত যেখানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সাদা পাথরে লেখা রয়েছে। 

শাশ্বত মুজিব

অন্যটি মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত ‘শাশ্বত মুজিব’।

শাশ্বত মুজিব মুর‍্যালটি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে স্মরণে রাখতে তার প্রতিকৃতিতে তৈরি। শাশ্বত মুজিবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অন্নদাশঙ্কর রায় ও ইংরেজ লেখক টেরি প্র্যাচেটের দুটি উক্তি খোদাই করা রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে উচ্চতর গবেষণা করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নিচতলায় বঙ্গবন্ধু কর্নার তৈরি করা হয়েছে। ২০১৮ সালে  সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী এটি উদ্বোধন করেন।

এদিকে, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ২০২০ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের সেমিনার লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু লাইব্রেরি চালু করা হয়েছে। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী এটি উদ্বোধন করেন। সাম্প্রতিক সাদ্দাম হোসেন হলের সেমিনার লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করা হয়।

অপর দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বঙ্গবন্ধু চেয়ার, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উচ্চতর গবেষণার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া হয় ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থানেই দেখা মিলবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির নিদর্শন। যা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মাঝে উজ্জীবিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

বাঙালির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববাসীর মননবোধে চিরন্তন ও চিরঞ্জীব। তার কোনো মৃত্যু নেই। যতই দিন, কাল, সময়, বছর অতিক্রান্ত হবে, ততই বঙ্গবন্ধু অধিকতর জ্যোতির্ময় হয়ে বিশ্ব ইতিহাসে নবতর অধ্যায়ে চন্দ্রাতপ রূপ পরিগ্রহ করবেন। বিশ্বনন্দিত মহানায়কদের কীর্তিগাথায় বঙ্গবন্ধুর অতি উঁচু মর্যাদায় সমাসীন আছেন ও থাকবেন।

রবিউল আলম/এমএ

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর