ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বুধবার (৮ মে) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। তবে জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। যদিও অনেক জায়গায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন দলটির তৃণমূল নেতারা। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। প্রথম ধাপে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্তত ৭৬ জনসহ সারাদেশে ১৪৪ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, যারা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তারা বেশিরভাগই স্থানীয় পর্যায়ের নেতা বা দলের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নয়। স্থানীয়ভাবে অন্য প্রার্থীকে সুবিধা দিতেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তারা। তাদের দলের আগাছা বলেও মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলছেন, এই ভোটে অংশগ্রহণ মানে সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া, এই নির্বাচন কমিশনকে স্বীকৃতি দেয়া। সুতরাং, এই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করার কোনো প্রশ্নই আসে না।
বিএনপি কেন স্থানীয় নির্বাচন বয়কট করছে তার যুক্তি তুলে ধরে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই গ্রহণযোগ্যতা পেতে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপিকে নিয়ে একটি ফাঁদ পাততে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ, কিন্তু বিএনপি সে ফাঁদে পা দেয়নি।’
বিএনপি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলেও অনেক জায়গায় দেখা গেছে- বিএনপির তৃণমূল নেতারা অংশ নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, যারা অংশ নিয়েছে তারা বেশিরভাগই স্থানীয় পর্যায়ের, বড় কোনো নেতা নয়। যেহেতু তারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাই ইতোমধ্যে দল থেকে তাদের চিরদিনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের কোনো বোঝাপড়ার ঘাটতি রয়েছি কিনা- এমন প্রশ্নে প্রিন্স বলেন, আমরা যেহেতু গণতন্ত্রের চর্চা করি, তাই দলের মধ্যে ভিন্নমত থাকতে পারে। তাই এ নির্বাচনের আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে স্থানীয় প্রায় ৫০০ নেতাদের নিয়ে অনলাইনে বৈঠক হয়েছে। সেখানে মাত্র ১০ থেকে ১২ জন নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মতামত দেয়। বাকিরা সবাই নির্বাচনের বিপক্ষে ছিল। তৃণমূলের সিদ্ধান্ত নিয়েই আমরা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে তৃণমূলের কোনো বোঝাপড়ার ঘাটতি নেই বলেও মন্তব্য করেন দলটির এ নেতা।
এভাবে বহিষ্কার করতে থাকলে একসময়ে দলে নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে ১৫ থেকে ২০ জন বিএনপি নেতা অংশ নিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বিএনপির কেউ তাদের সঙ্গে নেই। তাদের বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা বয়কট করেছে। তাদের বহিষ্কার করার মাধ্যমে বিএনপিও জঞ্জাল মুক্ত হয়েছে। আমরা মনে করি এরা দলের জন্য আগাছা। এরা ডামি প্রার্থী। তারা বর্তমান সরকারের কিছু প্রার্থীকে সুবিধা দিতেই এই একতরফা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
বিএনপির কিছু নেতা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলেও দলটির অন্যতম বড় শরিক দল জামায়াতে ইসলামী প্রথমে উপজেলা নির্বাচন অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায়। ঈদুল ফিতরের পরপরই দলটি তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টানোর নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে জানিয়ে দেয়। এর আগে জামায়াতের অন্তত ২২ জন নেতা প্রথম ধাপের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিল। পরে তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির মতো বড় দল নির্বাচনে অংশ না নেয়া গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হলেও এই নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া উচিত ছিল। কেননা, এর মাধ্যমে তারা তৃণমূলে জনপ্রিয়তা প্রমাণের একটা সুযোগ পাবে।