শনিবার, জুন ২১, ২০২৫
spot_img

অনলাইন জুয়ায় ১০মাসে কোটিপতি রাজমিস্ত্রীর লেবার কিশোর সাব্বির

মো:হানিফ মেহমুদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: বয়স মাত্র মাত্র ১৭ বছর, পড়াশোনা করেছেন ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত। তার রয়েছে দুইটি উচ্চমূল্যের নতুন ফোরভি ও জিক্সার মোটরসাইকেল। দুটি মোটরসাইকেলের আলাদা করে আছে দুইজন ড্রাইভার। হাতে রয়েছে দুটি আইফোন। ওই কিশোরের উপার্জনেই নির্মাণ হচ্ছে অর্ধকোটি টাকার বিশালবহুল বাড়ি। সম্প্রতি এলাকায় হওয়া একটি মাহফিলে সেই কিশোরই মসজিদ-মাদরাসার উন্নতিকল্পে দান করেছেন দেড় লাখ টাকা। ১৭ বছরের এই কিশোরের নাম সাব্বির মোল্লা। তার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দুধাই গ্রামে।

মাত্র ১০ মাস আগেও কিশোর সাব্বির মোল্লা ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর লেবারের কাজ করতেন। তার বাবাও দীর্ঘদিন ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করে এলাকায় ফিরে শুরু করেন অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ। পাশাপাশি দুই বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করতেন কোটিপতি কিশোর সাব্বির মোল্লার বাবা খলিল মোল্লা। আড়াই কাঠা ভিটেমাটি থাকা সাব্বির মোল্লার জীবন পাল্টে দিয়েছে অনলাইন জুয়া। এখন সে কোটি টাকার মালিক। তরুণ-যুবকদের কাছ থেকে ডলার হাতিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনেছেন সাব্বির।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অনলাইন জুয়া কোটেক্স টেড্রিংসহ কয়েকটি অনিবন্ধিত ও ভুয়া ওয়েবসাইটে মোটা অংকের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণ-যুবকদের আকৃষ্ট করায় সাব্বির মোল্লার কাজ। বর্তমানে দেশব্যাপী বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। একদিকে, তরুণ-যুবকরা লোভে পড়ে কাড়ি কাড়ি অর্থ হারালেও ফুলে ফেঁপে উঠেছে সাব্বির মোল্লার সম্পদের পাহাড়। এতে আলিসান বাড়ি, বিভিন্ন জায়গায় জমি ও বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে এলাকায় সাব্বির ট্রেডিং নামে পরিচিত অনলাইন জুয়ার মূলহোতা সাব্বির মোল্লা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরা জানান, গত এক বছর আগেও একবেলা খেয়ে, আরেক বেলা না খেয়ে জীবনযাপন করেছেন সাব্বির মোল্লার পরিবার। অথচ এখন দুধাই গ্রামের সবচেয়ে বড় ধনী ব্যক্তি সে। অনলাইন জুয়ার বদৌলতে এখন বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক। বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার মালিক সাব্বির মোল্লা। পারিবারিক অনটনে ক্লাস ভাইভের বেশি পড়াশোনা করতে না পারলেও অনলাইন জুয়ার হাত ধরে এখন কোটিপতি সাব্বির। বর্তমানে তার অধীনে কাজ করছে ৪৫ হাজার তরুণ-যুবক। সাব্বির মোল্লার এসব অবৈধ কর্মকান্ডের সকল লেনদেন হয় একই গ্রামের মোরশালিনের ছেলে মোমিনের মাধ্যমে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, মাত্র ১০ মাস আগে ঢাকায় সাব্বির আমার অধীনে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেছে। কিন্তু এখন তার রমরমা কারবার। অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আয় করছে। তার অধীনে এখন এসব অনলাইন জুয়ায় কাজ করছে হাজার হাজার ছেলে। তার পুরো লাইফস্টাইল চেঞ্জ হয়ে গেছে। তার কারনে শতশত তরুণ-যুবকরা নি:স্ব হচ্ছে, কিন্তু দিন দিন তার সম্পদের পাহাড় তৈরি হচ্ছে।

সাব্বির মোল্লার বিষয়ে তার অবৈধ অনলাইন জুয়া নিয়ে কথা বললেও ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে নারাজ স্থানীয়রা। তবে বছরখানেক আগের অবস্থা ও এখন অবস্থার পার্থক্যের কথা স্বীকার করে সাব্বির মোল্লার বাবা খলিল মোল্লা, তার মা ও খালা জানান, পারিবারিক অভাব অনটন ছিল অনেক। খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করতে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারেনি সাব্বির মোল্লা। কিন্তু অল্প বয়সেই অনলাইনের মাধ্যমে উপার্জন করে এখন দিনকাল ভালোই চলছে। কিছু টাকা-পয়সাও উপার্জন হয়েছে। সেখান থেকেই বাড়ি ও গরুর খামার নির্মাণ এবং মসজিদ-মাদরাসার জন্য দেড় লাখ টাকা দান করেছে।

পরিবারের সদস্যরা সাব্বির মোল্লা পঞ্চম শ্রেণীর কথা বললেও অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন বলে দাবি অনলাইন জুয়ার মূলহোতা সাব্বির মোল্লার। কিছুদিন অনলাইন জুয়া করলেও এখন তা করছেন না বলে জানান তিনি। সাব্বির মোল্লা বলেন, বছরখানেক আগে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতাম। কিন্তু এরপর প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছুদিন অনলাইন ট্রেডিংয়ে (জুয়া) কাজ করেছিলাম। পরে এখন অনলাইন মার্কেটিংয়ের কাজ করছি। আগে অভাব-অনটন থাকলেও পরিশ্রমের মাধ্যমে এখন কিছু টাকা-পয়সা উপার্জন করছি।

অনলাইন ট্রেডিংকে (জুয়া) অবৈধ উল্লেখ করেন সাব্বির মোল্লা। বাবা-মা ও স্থানীয়রা মসজিদ-মাদরাসায় দেড় লাখ টাকা দানের কথা বললেও অস্বীকার করে তা ৫০ হাজার বলে দাবি করেন তিনি। সাব্বির মোল্লা আরও বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক। কিন্তু আমি অনলাইনে কাজ করে ও কয়েকটি গরু পালন করে বাড়ি নির্মাণ করছি। এমনকি জমিজমা কেনার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।

/এমএ

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর