বৃহস্পতিবার, মে ১, ২০২৫
spot_img

পঞ্চগড়ে ঐতিহাসিক মোগল স্থাপত্য মির্জাপুর শাহী মসজিদ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ের অন্যতম এক মোগল স্থাপত্য মির্জাপুর শাহী মসজিদ। পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় অবস্থিত মসজিদটি মোগল আমলের ঐতিহাসিক একটি স্থাপনা। দেশের মোগল স্থাপত্যের নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মসজিদ।

মির্জাপুর শাহী মসজিদটি ১৬৫৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছে।মসজিদটি নির্মাণ নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য আছে। তবে এটা যে মোগল স্থাপত্য, তাতে একমত সবাই। কারণ, মসজিদটিতে রয়েছে মোগল স্থাপত্য রীতির সুস্পষ্ট ছাপ। মসজিদের শিলালিপি ঘেঁটে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ধারণা করেন। এ ছাড়া ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে (সম্ভাব্য) ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে নির্মিত মসজিদের সাথে সাদৃশ্য থাকায় এই মসজিদটিও সমসাময়িক কালে নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

শিল্প সৌন্দর্যের অপূর্ব নিদর্শন এই মসজিদের সর্বত্র ইসলামী টেরাকোটা ফুল ও লতাপাতার নকশায় পরিপূর্ণ। মসজিদে ব্যবহৃত ইটগুলো রক্তবর্ণ ও অলঙ্কৃত। যা বর্তমান সময়ের ইটের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন।মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট, প্রস্থ ২৫ ফুট এবং এক সারিতে তিনটি গম্বুজ আছে।

বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নে উল্লেখ করা হয়েছে, দোস্ত মোহম্মদ নামের এক ব্যক্তি এটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে পারস্য ভাষায় লিখিত মধ্যবর্তী দরজার উপরিভাগে একটি ফলক রয়েছে। ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী ধারণা করা হয়, মোগল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদটির দেয়ালের টেরাকোটা ফুল এবং লতাপাতার নকশা খোদাই করা রয়েছে। মসজিদের সন্মুখভাগে আয়তাকার টেরাকোটার নকশার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একটির সাথে অপরটির কোনো মিল নেই, প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা।

মসজিদের নির্মাণ শৈলীর নিপুণতা ও দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। মসজিদের গম্বুজের শীর্ষবিন্দু ক্রমহ্রাসমান বেল্টযুক্ত, চার কোণে রয়েছে স্তরযুক্ত ও নকশা খচিত বেল্ট করা চারটি সুচিকন মিনার। এ ছাড়া সামনের দেয়ালের মধ্য দরজার দুই পাশে মধ্য গম্বুজের সাথে সমন্বয় রেখে নির্মিত হয়েছে আরো দুটি ক্ষুদ্র মিনার। এই মিনারের দেয়াল সংযুক্ত অংশ বর্গকার। একই রকমের দুটি ক্ষুদ্রাকৃতির মিনার রয়েছে পশ্চিম দেয়ালেও।

চুন–সুড়কি দিয়ে তৈরি মির্জাপুর শাহী মসজিদের সামনের দেয়ালে রয়েছে সুশোভন লতাপাতা ও ইসলামী ঐতিহ্যপূর্ণ টেরাকোটা নকশা খচিত মাঝারি আকৃতির তিনটি দরজা। তিনটি দরজাতেই ছাদ ও দরজার উপরিভাগের মাঝামাঝি স্থানে বাইরের দিকে উভয় পাশে ঢালু তোরণ আকৃতির একটি অতিরিক্ত স্ফীত অংশ সংযুক্ত হওয়ায় অলঙ্করণ বিন্যাসে সৃষ্টি হয়েছে নতুনত্ব।

মসজিদের মূল ভবনের সামনে রয়েছে একটি আয়াতাকার পাকা অঙ্গন। অঙ্গনের উপরিভাগ উন্মুক্ত। অঙ্গনের বাইরে রয়েছে একটি সুদৃশ্য পাকা তোরণ। তোরণটির নির্মাণ কৌশলও অপূর্ব। এতে রয়েছে খিলান করা অন্তঃপ্রবিষ্ট দরজা, উভয় পাশে খাঁজ করা স্তম্ভ এবং ঢাল ও অর্ধ বৃত্তাকার, নাতিদীর্ঘ একটি গম্বুজ। শিল্প সৌন্দর্যের অপূর্ব নিদর্শন এই মসজিদের সর্বত্র ইসলামী টেরাকোটা ফুল ও লতাপাতার নকশায় পরিপূর্ণ। মসজিদে ব্যবহৃত ইটগুলো রক্তবর্ণ ও অলঙ্কৃত। যা বর্তমান সময়ের ইটের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

মির্জাপুর শাহী মসজিদের আদি নির্মাতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে জনশ্রুতি মতে ও মির্জা বংশীয় উত্তরসুরীগণের অভিমত অনুযায়ী জানা যায়, মির্জাপুর গ্রামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পূর্বপুরুষ ফুল মোহাম্মদ এই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন। পরে ফুল মোহাম্মদের ভাই দোস্ত মোহাম্মদ সম্ভবত এর নির্মাণ কাজ শেষ করেন। এক সময় প্রবল ভূমিকম্পে মসজিদটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রায় দুইশত বছর পূর্বে মুলুকউদ্দীন বা মালেকউদ্দীন এই মসজিদের মেরামত ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি হুগলির মসজিদের ইমামের মাধ্যমে ইরান থেকে কারিগর এনেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই পর্যটকরা এই মসজিদ দেখতে আসে।

যাতায়াত: পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে মির্জাপুরের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। মির্জাপুর থেকে পূর্বদিকে রিক্সা বা ভ্যানযোগে এক কিলোমিটার গেলেই স্থাপত্যশিল্পের অনিন্দ্য এক নিদর্শন চোখে পড়বে, এটাই মির্জাপুর শাহী মসজিদ।

মোঃ ওয়াহেদুল করিম/এমএ

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর