বুধবার, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
spot_img

আলতাদিঘী ওয়াচ টাওয়ারে প্রকৃতির টানে পর্যটকদের ভিড়

মোঃ এ কে নোমান: নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত আলতাদিঘী তার ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। দীঘির সৌন্দর্য কিছুটা ম্লান হলেও নতুন আকর্ষণ হিসেবে ৭০ ফুট উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ার পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখান থেকে সবুজ শালবন, দীঘি, এবং আশপাশের গ্রামীণ দৃশ্য এক নজরে দেখা যায়, যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।

নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৬১ কিলোমিটার উত্তরে এবং জয়পুরহাট থেকে ১৯ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এই দীঘি ভারতের সীমান্তঘেঁষা এলাকায়। ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আলতাদিঘী ও আশপাশের ৬৫২.৩৭ একর এলাকাকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীঘির মোট আয়তন ৫৫.৪৬ একর, যার মধ্যে জলাশয় ৪২.৮১ একরজুড়ে বিস্তৃত। আশপাশের ঘন শালবন প্রাকৃতিক পরিবেশকে আরও বৈচিত্রময় করে তুলেছে।

আলতাদিঘী সহ আশেপাশের এলাকা জুড়ে শালগাছ ছাড়াও রয়েছে সর্পগন্ধা, জারুল, বেত, মহুয়া, সেগুন, কড়ই, অর্জুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সমাহার । বনাঞ্চলটি পাখি এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল। পাখিদের কলরব এবং পাতার ফাঁক গলে আসা রোদের খেলায় এখানে এক অনন্য অনুভূতি সৃষ্টি হয়।

টাওয়ারে উঠে চোখে পড়ে সবুজের বিশাল কার্পেটের মতো বিস্তৃত বনভূমি এবং দীঘির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। বাতাসে দোল খাওয়া গাছের পাতা এবং পাখিদের উড়ে বেড়ানো দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। টাওয়ারে ওঠার কিছুটা কষ্টসাধ্য হলেও একবার চূড়ায় পৌঁছালে সব ক্লান্তি ভুলে যায় ভ্রমণপ্রেমীরা।

ছুটির দিনে এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। অনেকেই ক্যামেরা নিয়ে আসেন এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যপট ও বন্যপ্রাণীর ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, টাওয়ার ও শালবনকে ঘিরে পর্যটন ব্যবস্থা আরও উন্নত করা গেলে এলাকাটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে পারে।

তবে, দীঘির পানি কমে যাওয়া এবং অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। শালবন এখনো তুলনামূলকভাবে ভালো থাকলেও এর সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। পর্যটকদের জন্য টাওয়ারে ওঠার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা প্রয়োজন।

আলতাদিঘীকে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। পর্যটকদের জন্য বসার জায়গা, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন টয়লেট, এবং উন্নত খাবারের দোকান স্থাপন করলে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আরও উন্নত হবে। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে ঘিরে গাইড বা ভ্রমণ প্যাকেজ চালু করা যেতে পারে।

ওয়াচ টাওয়ার ও শালবনের নৈসর্গিক দৃশ্য একে অপরের পরিপূরক হয়ে পুরো এলাকাকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় এবং পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়, তবে এটি দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দারা আশা করছেন, নীতিনির্ধারকরা এই অঞ্চলের প্রতি বিশেষ নজর দেবেন এবং পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর