রবিবার, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫
spot_img

গফরগাঁওয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও উৎকোচের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ জেলাধীন গফরগাঁও উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোফাখখার ইসলামের বিরুদ্ধে উপজেলায় কর্মরত মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের  উৎকোচের বিনিময়ে  বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

গফরগাঁও উপজেলা পরিষদের নিকটবর্তী অবস্থিত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত  মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল এবং মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন  অনুসন্ধান চালিয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করা গেছে।  

জানা গেছে, এই উপজেলায় অধিকাংশ জায়গার স্কুল ও মাদ্রাসা গুলোতে জাল সনদের ভিত্তিতে শিক্ষক

নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে কমিটি কিংবা উর্ধতন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে। ফলে যাচাই বাচাই ছাড়াই বেতন ভাতা সহ অন্যান্য সুবিধার পাশ হয়ে যায় সহজেই।  

তারই তথ্য মিলেছে গফরগাঁও উপজেলার  যশরা ইউনিয়নে শিবগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত যশরা আয়েশা হাসান দাখিল মাদরাসায়। সেখানে কম্পিউটার শিক্ষার সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন মোঃ কামরুল ইসলাম। যার ইনডেক্স নং ২১০৩৭৯৮। অভিযোগ রয়েছে তার কম্পিউটার সনদ এবং বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক  নিবন্ধন সনদ জাল এবং ভুয়া। 

তার বিরুদ্ধে  ২০২০ সালের ১৯ আগষ্ট গফরগাঁও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ‘উমাশিঅ/গফর/ময়মন/২৩৪”  স্মারকে  জাল জালিয়াতির তথ্য প্রমান উপস্থাপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং  অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে চার বছরেও মিলেনি তদন্ত প্রতিবেদন।

উপরোক্ত স্মারকের  অভিযোগে বলা হয়েছে, যশরা আয়েশা হাসান দাখিল মাদরাসায় কর্মরত কম্পিউটার শিক্ষক মোঃ কামরুল ইসলামের কম্পিউটার সনদ ও নিবন্ধন সনদ জাল।  মাদরাসা সুপার মোখলেছুর রহমান মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে কামরুল ইসলামকে জাল জালিয়াতি করে নিয়োগ দিয়েছেন।  পরে স্বাক্ষী প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগপত্রের সাথে  ২০১৪ সালের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রতিবেদন এবং অন্যান্য কাগজ পত্র দাখিল করা হয়েছে । পরে  অভিযোগের স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে কামরুল ইসলাম ও সংশ্লিষ্টদেরকে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ সরকারী টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরতের দাবী করা হয়েছে।  

তার  প্রেক্ষিতে একই বছরের ২৬ আগষ্ট তদন্তের তারিখ টিক করে  কমিটি গঠন করেন তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন।  ২০২০ সালের ১৯ আগষ্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোফাখখারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত কমটির মাধ্যমে ২৬ আগস্ট আয়েশা হাসান মাদরাসায় তদন্ত করে এই কমিটি। অজ্ঞাত কারনে চার বছরের বেশি সময় পার হলেও মিলেনি তদন্ত প্রতিবেদন।  ফলে নিরাপদে সনদ জটিলতা নিয়েই চাকরি করছেন এই শিক্ষক।  হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারি অর্থ।

এব্যপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোফাখখারুল ইসলামের সাথে সাংবাদিকদের দীর্ঘক্ষণ আলাপ হলেও  তিনি দেখা দেখাতে পারেননি তদন্ত প্রতিবেদন।  আসেনি সন্তোষজনক কোন উত্তর। এক পর্যায়ে তিনি বলেন প্রতিবেদন দিয়েছি কি দেইনি মনে পরছেনা। তবে নথিতেও নেই প্রতিবেদন।

শিক্ষা অফিসের কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে জালিয়াতি করে চাকরি নেওয়া কামরুলের নিয়মিত অফিসে যোগাযোগ রয়েছে।  এবং মাদরাসা সুপার মোখলেছুর রহমান তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। 

আয়েশা হাসান দাখিল মাদরাসা সাবেক এবং বর্তমান 

কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারী জানিয়েছেন, জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ও জাল কম্পিউটার সনদ দিয়ে মোঃ কামরুল ইসলাম নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন নিয়মিত ।  এবং মাদরাসা সুপার মোঃ মোখলেছুর রহমান দুদকের চার্জশীট ভুক্ত ময়মনসিংহ বিজ্ঞ স্পেশাল জজ আদালত ০২/২০২১  বিশেষ মামলার ১ (এক) নম্বর আসামী। তিনিও  নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করতেছেন বলেও  জানিয়েছেন তারা।  তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপের প্রমান পাওয়া যায়নি। 

ইয়াসিন সিরাজী নামে একজন জানিয়েছেন, জাল সনদের দলিল দস্তাবেজ সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে।  কোন দপ্তর তাদের  বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় নাই। সুপার মোঃ মোখলেছুর রহমান তার পক্ষে। সে শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য। সে বলে আমাকে কে কি করবে? সকল দপ্তর তারা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ফেলেছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া ইয়াসমিনের সাথে  মুঠোফোনসহ বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। 

ময়মনসিংহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক রওশন আরা খান বলেন,  এই ধরনের অভিযোগ কোথাও পাওয়া গেলে দুদকসহ সকল বিভাগ আইনগত ব্যবস্থা নিবে। তবে একাধিক মিটিং ব্যস্ততার অজুহাতে কথা বলা হয়নি ময়মনসিংহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহছিনা খাতুনের সাথে।  

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মফিদুল ইসলাম জানান,  জাল জালিয়াতির তথ্য প্রমানসহ কোথাও পাওয়া গেলে তার সকল অর্থ রাষ্টীয় কোষাগারে ফেরতযোগ্য। কাগজপত্র সহ সঠিক তথ্য দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার কথাও জানান তিনি।

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর