নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ জেলার ধামইরহাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শফিকুল ইসলাম অপহরণকাণ্ডের ভিকটিম উদ্ধার এবং অপরাধীদের গ্রেফতারে দৃষ্টান্তমূলক সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। জয়পুরহাট জেলার সদর থানার বুজরুক গ্রামের সন্তান শফিকুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষে ২০২০ সালে এসআই হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদায় মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে তিনি নওগাঁতে যোগদান করেন এবং পরে ধামইরহাট থানায় দায়িত্ব পালন শুরু করেন। থানায় যুক্ত হওয়ার পর থেকেই অপরাধ দমন ও ভিকটিম উদ্ধার কার্যক্রমে তার ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছে।
চলতি বছরে এসআই শফিকুল প্রায় ৩০টিরও বেশি ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন, যার মধ্যে ২০ জন শিশু। প্রতিটি ঘটনায় তৎপরতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তিনি ভিকটিমদের পরিবারে ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সর্বশেষ ২ নভেম্বর ঢাকায় অভিযান পরিচালনা করে দুজন শিশু ভিকটিম উদ্ধার ও দুজন আসামিকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন। এই অভিযান তার দক্ষতা ও দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ।
ভিকটিম উদ্ধার কার্যক্রমে এসআই শফিকুল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন অভিভাবক। সম্প্রতি মো. আ. রশিদ নামের এক অভিভাবক জানান, তার মেয়েকে গত মাসে অপহরণ করা হলে তিনি ২৪ অক্টোবর থানায় মামলা করেন। মামলা দায়েরের মাত্র ৮ দিনের মধ্যে শফিকুল ইসলাম ঢাকা থেকে তার মেয়েকে উদ্ধার করেন। অন্য আরেক ভুক্তভোগী অভিভাবক মো. মামুনুর রশিদ জানান, তার মেয়ে অপহরণের শিকার হলে ২ নভেম্বর মামলা করার পরদিনই শফিকুল তার মেয়েকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। মামুনুর রশিদ বলেন, “এসআই শফিক অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও মানবিক অফিসার। তিনি নিজ উদ্যোগেই কাজটি করেন, কোনো তাগাদা দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।”
এসআই শফিকুল ইসলাম জানান, অপহরণকাণ্ডে জড়িতদের অধিকাংশই প্রেমের সম্পর্কের জালে জড়িয়ে বা বন্ধুর প্ররোচনায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে প্রতারণা ও টিকটকের জনপ্রিয়তার ফাঁদেও অনেকে পড়ে। এই বিষয়গুলো সামনে রেখে তিনি প্রতিটি মামলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অভিযানে নামেন।
তিনি বলেন, “ভিকটিমদের উদ্ধার করার পাশাপাশি তাদের আইনগত সুরক্ষা ও মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা করি। পাশাপাশি তাদের সামাজিক সচেতনতার ধারণাও দেওয়া হয়, যাতে ভবিষ্যতে তারা আর এ ধরনের বিপদে না পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সঙ্গেও ভিকটিমদের সমঝোতা করানো হয়।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এমন সফলতায় জেলা পুলিশ সুপার এবং থানার অফিসার ইনচার্জের যথাযথ নির্দেশনা ও সহযোগিতা তার পক্ষে সহায়ক হয়েছে।
এসআই শফিকুল মনে করেন, ভিকটিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপহরণের প্রবণতা কমাতে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। তিনি বলেন, “অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে বিপথে চলে যায়। এজন্য স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অভিভাবকদের আরও যত্নবান হওয়া দরকার।”
শফিকুল ইসলামের মতে, শিক্ষকদের উচিত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এসব বিষয়ে আলোচনা করা, যাতে তরুণ সমাজ এ ধরনের বিপথগামী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে। তিনি বিশ্বাস করেন, এ ধরনের সচেতনতা সমাজে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এসআই শফিকুল ইসলাম ধামইরহাট থানার একজন সৎ ও কর্মপরায়ণ পুলিশ অফিসার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। অভিভাবকদের জন্য সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তার নিরলস প্রচেষ্টা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা তাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে।
মো: এ কে নোমান/এমএ