শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
spot_img

ঈশ্বরদীতে পাড়া মহল্লায় সাড়া ফেলেছে ‘গোশত’ সমিতি

সিয়াম রহমান, ঈশ্বরদী (পাবনা): ঈশ্বরদী সহ পাবনা জেলা জুড়ে গত ৫-৭ বছর ধরে প্রায় গ্রামেই গড়ে উঠেছে একাধিক ‘গোশত’ সমিতি। যার মাধ্যমে মাংস কেনার টার্গেট নিয়ে গ্রামীণ মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ছর জুড়ে টাকা জমান। বছর শেষে তারা নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে গরু বা মহিষ কিনে মাংস বণ্টন করে নিচ্ছেন। এতে বাজারে কসাইদের হাঁকানো দরের চেয়ে কেজিতে অন্তত একশ-দেড়শ টাকা কম দরে মাংস পাচ্ছেন তারা।

‘গোশত সমিতি’র সঙ্গে যুক্ত সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এ ধরনের গোশত সমিতি গঠন করা হয়। সমিতির মেয়াদ থাকে এক বছর। সমিতির অন্তর্ভুক্ত প্রতি সদস্য মাসে মাসে সমিতিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখেন। বছর শেষে ঈদের আগে জমাকৃত অর্থ একত্র করে পশু কেনা হয়। ঈদের দিন বা তার দু-একদিন আগে এই পশু জবাই করে গোশত সমিতির প্রত্যেক সদস্যকে ভাগ করে দেয়া হয়। প্রতিটি গোশত সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। তারা আরও জানান, সমিতির প্রত্যেক সদস্য সপ্তাহে ১০০ টাকা চাঁদা জমা দেন।

ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের দিয়াড় বাঘইল গ্রামের গোশত সমিতির মূল উদ্যোক্তা মাহমুদন্নবী জানান, তিন বছর আগে তিনি গ্রামের কয়েক বন্ধু মিলে উদ্যোগ নিয়ে এ গোশত সমিতি গঠন করেন। সমিতির মাধ্যমে গরু কিনে মাংস ভাগ করায় কম দামে ফ্রেশ মাংস পাওয়ায় যায়। এতে গ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দেয়। এতে পরের বছর সদস্য সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।

তিনি আরও জানান, তাদের সমিতিতে সেক্রেটারি ও ক্যাশিয়ার রয়েছেন। ক্যাশিয়ার বানানো হয়েছে গ্রামের মসজিদের ঈমাম হাফেজ আব্দুর রশিদকে । প্রত্যেক সদস্যকে পাশবই দেওয়া হয়েছে, তার জমা টাকার হিসাব মিলিয়ে নেওয়ার জন্য।

সমিতির সদস্য শ্রমিক রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ঈদে ছেলেপেলের কাপড়চোপড় কিনে টাকা শ্যাষ অয়া যায়। কোনোমতে তেল-সেমাই কিনি। আবার মাংস কেনব কীভাবে? যখন জানছি সমিতি অইছে, তহন থেন সমিতিতে নাম লেহাই। ঈদের আগে ৮ কেজি মাংস পাইছি।’

আরেক সদস্য জানান, সারা বছর ধরে সপ্তাহে সপ্তাহে টাকা জমা দিয়েছেন। এতে বছর শেষে ৬ হাজার টাকা জমা হয়েছিল, তিনি টেরই পাননি। এখন একসঙ্গে ৬ হাজার টাকার মাংস পাবেন।

এদিকে কসাইয়ের কাজ করা কিছু ব্যক্তি জানান, গ্রামে গ্রামে সমিতি বেড়ে যাওয়ায় তাদের কাজের চাহিদা বেড়ে গেছে।

এদিকে প্রবীণ মাংস বিক্রেতা সানোয়ার কসাই জানান, ঈদ উপলক্ষে তারা আগে যে মাংস বিক্রি করতেন তা এখন অর্ধেকও হচ্ছে না। কারণ গ্রামে গ্রামে একাধিক গোশত সমিতি হয়েছে। সমিতির লোকজন নিজেরাই গরু-মহিষ কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করেন।

এ ব্যাপারে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন পাবনার সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহবুব আলম জানান, গ্রামে গ্রামে এমন সমিতি গঠনের ফলে মাংস ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হচ্ছে। মানুষ ভালো মানের মাংস কম দামে পাচ্ছেন। যা বাজার নিয়ন্ত্রণেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর