রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
spot_img

প্রধান বিরোধী দল কে? জাতীয় পার্টি, নাকি স্বতন্ত্র!

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ৭ জানুয়ারি। এই নির্বাচনে ২৯৮ আসনের (২টি আসন স্থগিত) মধ্যে ২২২টিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। আর বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) মাত্র ১১টি আসনে জয় পেয়েছে। জাপাকে পেছনে ফেলে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। যদিও স্বতন্ত্র জয়ীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের (৫৮ জন)। এ অবস্থায় জাতীয় সংসদের বিরোধী দল কারা হবে, আর বিরোধী দলীয় নেতাই বা কে হচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

সংসদে বিরোধী দল কিংবা বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচনের বিষয়ে দেশের সংবিধানে কিছু বলা নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সংসদের স্পিকারের। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ২(১)(ট)-তে বলা বলা হয়েছে, ‘বিরোধীদলীয় নেতা’ বলতে স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত, ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসঙ্গের নেতা। নির্বাচনে জয়ের পরদিন সোমবার বিকেলে গণভবনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন শেখ হাসিনা। সেখানে বিদেশি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আপনি কি চান আমি একটি বিরোধী দল গঠন করি? আমি তা করতে পারি? আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দল গঠন করেছি। বিরোধীদেরও তা করতে হবে। আপনি যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার জন্য কে দায়ী?

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পাওয়ায় আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঐক্য করলে তারাও বিরোধী দল হতে পারে। আবার বিরোধী দলের আসনে কারা বসছে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘লিডার অব দ্য হাউস অর্থাৎ যিনি নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনিই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা; তারা জিতেছেন মোট ৬২ আসনে। আর গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১ আসন। এর বাইরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং এক সময় বিএনপির জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। লাঙ্গলে প্রতীকে জয়ী ১১টি আসন নিয়ে দৃশ্যত আবারও সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। তবে সংখ্যায় স্বতন্ত্ররা পাঁচগুণ বেশি হওয়ায় জাতীয় পার্টির বিরোধী দলের আসনে বসাটা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ৬২ জন হলেও তারা একা একা, সেজন্য তাদের আর বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি অন্য যে দলগুলো নির্বাচিত হয়েছে, তাদের মধ্যে যে কোনো দলকে সমর্থন দিতে পারে। যে দলের সমর্থন বেশি তারাই হবে বিরোধী দল। আর যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মিলে আলাদাভাবে কোয়ালিশন করতে পারে, তখন ওই কোয়ালিশন করাদের নিয়ে কতজন হবে, সেই হিসেবে তারাও বিরোধী দল হতে পারে।

জানা যায়, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই পেয়েছিল ২৯৩টি আসন। আর বিরোধী ছোট ছোট কয়েকটি দল মিলে পেয়েছিল বাকি সাতটি আসন। সেসময় এসব দল যৌথভাবে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের আতাউর রহমান খানকে তাদের নেতা উল্লেখ করে বিরোধী দলের নেতার মর্যাদা দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন জানান। তবে তৎকালীন সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাতে আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে একটি রাজনৈতিক দলের অবশ্যই কমপক্ষে ২৫টি আসন থাকতে হবে। না হলে তাদের পার্লামেন্টারি গ্রুপ হিসেবে বলা যেতে পারে, কিন্তু বিরোধী দল নয়।

এদিকে গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১ আসন। রংপুর-৩ (সদর ও সিটি করপোরেশন) আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জিএম কাদের। দলীয় প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় থাকার কারণে সংসদে বিরোধী দল ও বিরোধী নেতার বাছাইয়ের দৌড়ে রয়েছে জাতীয় পার্টি। সে কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকেই।

এস আই আর

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর