রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
spot_img

শত কোটির কোকেন পাচারের ট্রানজিট বাংলাদেশ

দেশের ইতিহাসে সলিড কোকেনের সবচেয়ে বড় চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে চালানটি আন্তর্জাতিক বাজারে পাচারের চেষ্টা করা হয়েছিল। পাচারকালে আফ্রিকান দেশ মালাওয়ের এক নাগরিককে আটক করা হয়। ৮ কেজি ৩০০ গ্রামের ওই চালানটি নিয়ে বাংলাদেশে আসেন পাচার চক্রের ওই নারী সদস্য।যার বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। 

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ডিএনসির উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) তানভীর মমতাজ এই তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে বুধবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো (৩৫) নামের ওই নারীকে কোকেনের চালানসহ গ্রেফতার করে ডিএনসি।

ডিএনসি জানিয়েছে, ইথোপিয়া অথবা মালাও থেকে বাংলাদেশে এসেছে ওই চালান। বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল চালানটি পাচার করার জন্য। কারণ এই পরিমাণ কোকেন চাহিদা বাংলাদেশে নেই।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) তানভীর মমতাজ বলেন, কোকেন চেরাচালানের আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের দেশি ও বিদেশি সক্রিয় কয়েকজন সদস্য কোকেনের চালানটি বাংলাদেশে এনেছে। তারা বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা চালিয়েছে। আফ্রিকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আফ্রিকান একজন নাগরিকের মাধ্যমে চালানটি ঢাকায় আসবে এমন তথ্য পাই আমরা।

এরপর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারি বাড়ানো হয়। এপিবিএনকে সঙ্গে নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি টিম গঠন করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় অবস্থান নেওয়া হয়। ফ্লাইটিতে নামা সব বিদেশি যাত্রীকে ফলো করা হয়।

এর মধ্যে দেখা যায়, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো নামের এক বিদেশি নারী বিমানবন্দরের নিচ তলায় ভিসা অন অ্যারাইভাল ডেস্কে দীর্ঘক্ষণ ধরে অবস্থান করছে। তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি স্বীকার করেন লাগেজে অবৈধ মাদকদ্রব্য কোকেন আছে। পরবর্তীতে লাগেজের ভেতরে বিশেষভাবে রক্ষিত ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন জব্দ করা হয়।

তানভীর মমতাজ বলেন, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো আফ্রিকান দেশ মালাওয়ের নাগরিক। তিনি প্রথমে ইথোপিয়ায় যান। পরে সেখান থেকে কাতারের দোহায় যান। সেখান থেকে কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি তার বাংলাদেশ থেকে আবারও মালাওতে যাওয়ার কথা ছিল। কোকেনের চালানটি বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করার কথা ছিল তার। পরে বাংলাদেশ থেকে কোকেনের চালানটি অন্য কোনো দেশে চলে যেত। আমাদের ধারণা তাওয়েরা সোকো কোকেনের চালানটি মালাও থেকে নয়তো ইথোপিয়া থেকে সংগ্রহ করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে সোকো জানায়, গার্মেন্টস ব্যবসার কথা বলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। এবারও বাংলাদেশের একটি গার্মেন্টসের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসেন। অন অ্যারাইভাল ভিসা নেওয়ার জন্য তিনি তার পরিচয় লুকিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। তিনি পেশায় একজন নার্স। তিনি মূলত কোকেনের এই চালানের বহনকারী। বাংলাদেশে তিনি আরেকজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই চালান পৌঁছে দিয়ে নিজ দেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল।

ডিএনসির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা তদন্ত করছি। বাংলাদেশ অবস্থারত কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের কাছে কোকেনগুলো যাওয়ার কথা ছিল। আমরা একজন বিদেশিকে সন্দেহ করছি। তদন্তের স্বার্থে এখন বলতে চাচ্ছি না। আশা করি চক্রটিকে ধরতে পারব।

কোকেনের আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ জড়িত আছে কি না জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক তানভীর মমতাজ বলেন, কোকেনের চালানের সঙ্গে দেশি এবং বিদেশি চক্র জড়িত আছে। চক্রটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।

কোকেনের চালানটি বাংলাদেশ থেকে কোন দেশে যাওয়ার কথা ছিলো এমন প্রশ্নের জবাবে মাদকের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের তদন্ত শেষে বলতে পারব। তবে এটা বলতে চাই কোকেনের চালানটি বাংলাদেশের জন্য ছিল না। কারণ বাংলাদেশে এই পরিমাণ কোকেন কনজিউম করার মার্কেট নেই।

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর